হৃদয়ে চিরজাগরূক :আজ জাতির পিতার ১০৩তম জন্মবার্ষিকী
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০২৩

- নানা আয়োজনে স্মরণ করবে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি
- আজকের দিনটি জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবেও উদযাপিত হচ্ছে
‘এই বাংলার আকাশ বাতাস, সাগর, গিরি ও নদী/ ডাকিছে তোমারে বঙ্গবন্ধু ফিরিয়া আসিতে যদি/ হেরিতে এখনও মানব হৃদয়ে তোমার আসন পাতা/ এখনও মানুষ স্মরিছে তোমারে, মাতা পিতা বোন ভ্রাতা।’ ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/ গৌরী মেঘনা বহমান/ ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান...’।
একজন ক্ষণজন্মা পুরুষ, যাঁর দৃঢ়তা ছিল ইস্পাত কঠিন, মানুষটির বিশাল হৃদয় ছিল, মানুষকে ভালবাসতেন অন্ধের মতো। দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে, তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্না রাতে রুপালি কিরণধারায় মায়ের স্নেহের মতো যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি ও নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে, তা হলো তাঁর ভালবাসা।
গোপালগঞ্জের অজপাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেয়া এক শিশু, তাঁর ডাক নাম ছিল খোকা। কালক্রমে সেই খোকাই হয়ে ওঠেন বাংলার মহানায়ক। তিনি আর কেউ নন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বঙ্গবন্ধু। তিনি আমাদের জাতির পিতা। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেয়া শিশুটি খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা হয়ে ওঠার পেছনে যে ইতিহাস সেটার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখে তাঁর অদম্য সাহস, দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালবাসা আর অসীম ত্যাগ।
মহাকালের আবর্তে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া এ নিয়মের মধ্যেও অনিয়ম হয় কিছু স্মৃতি, গুটিকয়েক নাম। বাংলা ও বাঙালীর কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি যেমন। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এ বাঙালীর অবদানের পাশাপাশি তাঁর জন্মের তিথিও চিরজাগরুক থাকবে বাঙালীর প্রাণের স্পন্দনে। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বাঙালীর জন্য আশীর্বাদের একটি দিন। আনন্দের দিনও বটে। এদিন হাজার বছরের শৃঙ্খলিত বাঙালীর মুক্তির দিশা নিয়ে জন্ম নিয়েছিল মুজিব নামের এক দেদীপ্যমান আলোক শিখার।
এ আলোক শিখা ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র, নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে পরাধীনতার আগল থেকে মুক্ত করতে পথ দেখাতে থাকে পরাধীন জাতিকে। অবশেষে বাংলার পুব আকাশে পরিপূর্ণ এক সূর্য হিসেবে আবির্ভূত হয়, বাঙালী অর্জন করে মুক্তি। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আজ নেই, কিন্তু সে সূর্যের প্রখরতা আগের চেয়েও বেড়েছে অনেকগুণ। তাঁর অবস্থান এখন মধ্যগগনে। সেই সূর্যের প্রখরতা নিয়েই বাঙালী জাতি আজ এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে।
আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের বিভিন্ন কর্মসূচী মধ্যদিয়ে এবার উদ্যাপিত হবে দিনটি। এর আগে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিন থেকে শুরু হয় মুজিববর্ষ। যা এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। আজকের দিনটি জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবেও উদ্যাপিত হবে।
দুইশ’ বছরের পরাধীনতার জিঞ্জির ছিঁড়ে এই বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাকামী বাঙালীর দীর্ঘ নয় মাস মৃত্যুপণ জনযুদ্ধের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে অর্জিত হয়েছিল মহামূল্যবান স্বাধীনতা। ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান এবং অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালী জাতি অর্জন করে তাদের হাজারও বছরের লালিত স্বপ্ন প্রিয় স্বাধীনতা। বিশ্বের মানচিত্রে স্থাপন করে সার্বভৌম বাংলাদেশ, নিজস্ব লাল-সবুজ পতাকায় আচ্ছাদিত হয় বাঙালীর হৃদয়। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রাম ও দূরদর্শী নেতৃত্বেই পৃথিবীর মানচিত্রে সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। পূর্ণতা পায় ভাষাভিত্তিক বাঙালী জাতীয়তাবাদ। পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ-বঞ্চনা, ঔপনিবেশিক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও দেশের মানুষের প্রতি মমত্ববোধের কারণে বাঙালীর ‘জাতির জনক’ উপাধী অর্জন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। জাতীয় মুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিংশ শতাব্দীতে যাঁরা মহানায়ক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সাম্য, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার বিরামহীন সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকার কারণে বঙ্গবন্ধু ভূষিত হয়েছিলেন নোবেলখ্যাত বিশ্বশান্তি পরিষদের ‘জুলিওকুরি’ পদকে। বিশ্বের কোটি কোটি বাঙালীর হৃদয়ের মণিকোঠায় বঙ্গবন্ধু যে অমলিন, তার প্রমাণ মেলে সারা বিশ্বের বাঙালীর ওপর পরিচালিত বিবিসির জরিপে। সারাবিশ্বের বাঙালীর শ্রদ্ধাঞ্জলিতে বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালী হিসেবে নির্বাচিত হন।
খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু (১৯২০-১৯৭৫) ॥ ১৯৩৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ পরিদর্শনে যান। তাঁদের আগমনে এক সংবর্ধনার আয়োজন করে কৃষক প্রজা পার্টি ও মুসলিম লীগ। মিশন স্কুল পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শের-ই-বাংলা ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যখন বাংলোতে ফিরে যাচ্ছিলেন, তখন রোগা পাতলা একটি বালক তাঁদের পথ আগলে দাঁড়ালেন। হতভম্ব সব ছাত্র ও শিক্ষক।
প্রধান শিক্ষক বারবার ধমক দিচ্ছেন, কিন্তু জেদি, একরোখা, লিকলিকে ছেলেটি নাছোড়বান্দা। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি আদায় না করে রাস্তা ছাড়বেন না বলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলার বাঘ খ্যাত প্রধানমন্ত্রীও অবাক। এতটুকুন ছেলে, অথচ কি অসম সাহসী, যে কিনা শের-ই-বাংলার পথ আগলে দাঁড়ায়! তবুও কণ্ঠে মাধুর্য এনে বললেন, ‘কি চাও তুমি?’ লিকলিকে বালকের সপ্রতিভ উত্তর, ‘আমাদের স্কুলের একমাত্র ছাত্রাবাসের ছাদ নষ্ট। পানি পড়ে টপটপ করে। ছাত্রদের বিছানাপত্র নষ্ট হয়ে যায়। এ কাজে প্রয়োজন মাত্র ২০০ টাকা। এটা সারাবার ব্যবস্থা না করে দিলে আমি পথ ছাড়ব না।’ অসম্ভব সাহসী, বিনয়ী আর পরোপকারী ছাত্রটির কথায় মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে সরকারী ত্রাণ তহবিল থেকে ১২শ’ টাকা মঞ্জুর করে দেন।
তিনিই হচ্ছেন টুঙ্গিপাড়ার খোকা, পরবর্তীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। মধুমতি, বাইগার নদীতে সাঁতার কেটে কেটেছে যার দুরন্ত শৈশব। সময়ের পরিক্রমায় এই খোকাই একদিন হয়ে ওঠেন বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব নেয়ার মতো মহান গুণ হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন শৈশবেই। মুষ্টি ভিক্ষার চাল উঠিয়ে গরিব ছেলেদের বই এবং পরীক্ষার খরচ বহন করা, বস্ত্রহীন পথচারী শিশুকে নিজের নতুন জামা পরাতেন। রাজনৈতিক দীক্ষাও নেন স্কুল জীবনেই।
১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ের কথা বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে নিজেই তুলে ধরেছেন- ‘দিন রাত রিলিফের কাজ করে কূল পাই না। লেখাপড়া মোটেই করি না। কলকাতা যাব, পরীক্ষাও নিকটবর্তী। আব্বা একদিন আমাকে ডেকে বললেন, বাবা রাজনীতি কর, আপত্তি করব না। পাকিস্তানের জন্য সংগ্রাম করছ, এ তো সুখের কথা। তবে লেখাপড়া না শিখলে মানুষ হতে পারবা না।’
হাজার বছরের শৃঙ্খলিত বাঙালীর মুক্তির দিশা নিয়ে জন্ম নিয়েছিল মুজিব নামের এক দেদীপ্যমান আলোক শিখার। এ আলোক শিখা ক্রমে ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র, নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে পরাধীনতার আগল থেকে মুক্ত করতে পথ দেখাতে থাকে পরাধীন জাতিকে। টুঙ্গিপাড়া গ্রামেই খোকা থেকে জাতির পিতায় পরিণত হওয়া শেখ মুজিবুর রহমান ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা শস্য শ্যামলা রূপসী বাংলাকে দেখেছেন। আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত ও বর্ধিত হয়েছেন।
তিনি শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে বঙ্গবন্ধু জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা পীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার। বস্তুতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে কোন শক্তির কাছে, যে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পণ করেননি, মাথানত করেননি।
চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়রা খাতুনের তৃতীয় সন্তান। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারী পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সময় বঙ্গবন্ধু চোখের বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে কলকাতায় তাঁর চোখের অপারেশন হয়। এই সময়ে কয়েক বছর তাঁর পড়াশোনা বন্ধ থাকে।
১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সুখ্যাত বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই সময়ে ইসলামিয়া কলেজছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময়ে তিনি শীর্ষ রাজনীতিক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীন হলে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গ্রেফতার হন আইনের ছাত্র তৎকালীন যুব নেতা শেখ মুজিব। এরপর দেশে খাদ্য সঙ্কটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়েও গ্রেফতার হন তিনি।
১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হলে কারাগারে থাকা অবস্থায় দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু।
১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে কারাগার থেকেই নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তিনি প্রাদেশিক সরকারের কৃষি, বন ও সমবায়মন্ত্রী হন। ১৯৫৬ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভায় শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম ও দুর্নীতি দফতরের মন্ত্রী হন বঙ্গবন্ধু।
কিন্তু ছাত্র জীবন থেকেই স্বাধীনতার জন্য বাংলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছুটে বেড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধু। প্রতিটি বাঙালীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন স্বাধীনতার শিকল ভাঙ্গার গান। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে ফের গ্রেফতান হন শেখ মুজিব। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৮-এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি স্বাধীকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সবার প্রিয় ‘মুজিব ভাই’।
পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর হাত থেকে বাঙালীর মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি ঘোষণা করেন। ওই বছরেই তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র’ নামে এক মামলায় পুনরায় গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে দেশের ছাত্র-জনতা। ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনের চাপে ২২ ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয়া হয়। ঊনসত্তরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তাঁকে দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পুরো বাঙালী জাতির পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন তৎকালীন ডাকসু ভিপি বর্তমান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ।
স্বাধীনতার জন্য পুরো জাতিকে একসুতোই গাঁথতে থাকেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার কথা। কিন্তু তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সংসদ অধিবেশন ডাকার পর স্থগিত ঘোষণা করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। পূর্ব বাংলায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে পশ্চিম পাকিস্তান। বঙ্গবন্ধুর অঙ্গুলি হেলনে পূর্ব বাংলা পরিচালিত হয়।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ইয়াহিয়া ও ভুট্টো ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠক করেন। এতে কোন সুরাহা না হওয়ায় ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, চালায় ইতিহাসের কলঙ্কজনক গণহত্যা। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার আগেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা দেন এবং বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
শুরু হয়ে যায় মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁকে রাষ্ট্রপতি করে বিপ্লবী সরকার (মুজিবনগর সরকার) গঠন করা হয়। এই সরকারের নেতৃত্বেই ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহার্ঘ্য স্বাধীনতা। বাংলাদেশ পায় একটি স্বাধীন দেশ, স্বাধীন মানচিত্র। দেশ স্বাধীন হলে পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ সংক্ষেপে বাকশাল নামে সর্বদলভিত্তিক একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন বঙ্গবন্ধু।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেন। তিনি শিল্পকারখানা, ব্যাংক-বীমা জাতীয়করণ করে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে বিশ্ব শান্তি পরিষদ বঙ্গবন্ধুকে নোবেলখ্যাত ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত করেন। কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতিই শুধু নয়, তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধী লোকসভায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন। দেশকে স্বাধীন করতে জীবনের মূল্যবান ১৩টি বছর কারাগারে কেটেছে বঙ্গবন্ধুর। দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রামে তিনি শত যন্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট-বেদনা সহ্য করেছেন, ফাঁসির মঞ্চও যাঁর কাছে ছিল তুচ্ছ- তিনি হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমান।
একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানী জল্লাদরা কারাবন্দী রেখে কবর খুঁড়েও যাঁকে হত্যা করার সাহস পায়নি, অথচ স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সেই হিমালয়সম ইস্পাতদৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একাত্তরের পরাজিত শক্তির পেতাত্মা নরপিশাচ ঘাতকরা হত্যা করে ক্ষমতার পালাবদল করেছিল। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের হয়ে কাজ করা ঘাতকচক্রের বুলেটে সেদিন ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের হৃৎপি-।
কিন্তু তারপরও একটি জাতি ও অবহেলিত মানুষের মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে বঙ্গবন্ধু শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বেই ইতিহাস হয়ে রয়েছেন। কারণ বঙ্গবন্ধু যে চিরঞ্জীব, চির অমলীন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশের জন্য তাঁর সুমহান আত্মত্যাগের ইতিহাস পড়ে নতুন শপথে বলীয়ান হবে, দেশকে ভালবাসবে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্রতী হবে।
‘৭৫-পরবর্তী ইতিহাসের এই রাখাল রাজার নাম মুছে ফেলার অনেক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের সকল ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ এবং সরকারী ছুটি ঘোষণা করে। কিন্তু ২০০১ সালে যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে সঙ্গে ক্ষমতায় এসেই বিএনপি ছুটি বাতিল করে দেয়। ২০০৯ সালে ভূমিধস মহাবিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার আবারও সরকারী ছুটি ঘোষণা করে। সেটি এখনও অব্যাহত আছে। তাই আজ সরকারী ছুটির দিন। কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক জাতি রাষ্ট্রের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শুভ জন্মদিন, হে জাতির পিতা।

- পহেলা বৈশাখ থেকে অনলাইনেই শতভাগ ভূমিকর: প্রধানমন্ত্রী
- লামার গজালিয়াতে দিন ব্যাপী পুষ্টি মেলা অনুষ্ঠিত
- বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত থেকে এক নেপালি নাগরিক আটক
- আগামী সপ্তাহে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে ট্রেন
- প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের জনগণকে বাইডেনের শুভেচ্ছা
- অগণতান্ত্রিক দল কীভাবে গণতন্ত্র দেবে, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
- ২৪ দিনে রেমিট্যান্স ১৬০ কোটি ডলার
- জুনেই ট্রেন চলবে পদ্মায়
- যে কোনো পর্যায়ে নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে ইসি
- দুর্নীতির দায় নিতে হবে ব্যাংকারদের
- তিন মাস আগেই পূর্বাভাস পাবেন কৃষকরা
- চুক্তিভিত্তিক চাষাবাদে বাংলাদেশিদের জমি দিতে রাজি মৌরিতানিয়া
- ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিতে ৭ বছর সময় পাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো
- পবিত্র কুরআনের ৬ পারায় যা বলা হয়েছে
- আলীকদমে নির্মিত হচ্ছে পানি শোধানাগার,কষ্ট লাঘব হবে হাজারো জনগণের
- বান্দরবানের আজিজনগর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে গৃহকর্মী মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের
- বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হলো বিশেষ সাহিত্য পুরস্কার
- দ্রুতই আঞ্চলিক নেতা হয়ে উঠছে বাংলাদেশ: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- অর্থনৈতিক উন্নয়ন অসাধারণ অর্জন বাংলাদেশের
- বাংলাদেশ হয়ে আগরতলা থেকে ট্রেন যাবে কলকাতায়
- জঙ্গিবাদ নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
- প্রতি জেলায় মা ও শিশু হাসপাতাল করা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- ট্রাউজারের সিংহভাগই সরবরাহ করছে বাংলাদেশ
- ভারতের পররাষ্ট্র নীতির শক্তিশালী স্তম্ভ বাংলাদেশ —এস জয়শংকর
- পবিত্র কুরআনের ৫ম পারায় যা রয়েছে
- জিতবে না জেনেই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী
- সরকারের সদিচ্ছায় সাদা সোনা বদলে দিচ্ছে পার্বত্য চট্রগ্রামের অর্থনীতি
- রোটারি ক্লাব অব বান্দরবানের উদ্যাগে গরীব ও অসহায়দের ইফতার সামগ্রী বিতরণ
- দেশের মানুষের উন্নত জীবনের লক্ষ্যেই জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দেন: প্রধানমন্ত্রী
- জাতির পিতা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য:প্রধানমন্ত্রী
- বান্দরবানের তিন উপজেলায় পর্যটকদের ভ্রমনে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা
- বান্দরবানের রুমা বগালেক সড়কে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৬জন
- বান্দরবানে বাস মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংর্ঘষে আহত ১
- ঋণখেলাপিরা সিআইপি হতে পারবেন না
- বান্দরবানে ৯ জন জঙ্গি আটক,বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র,গোলাবারুদ উদ্ধার
- থানচির বলিপাড়া বাজারে ভয়াবহ আগুন,পুড়ে ছাই অর্ধশতাধিক দোকান
- শত সমস্যার পরও উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছি:শেখ হাসিনা
- সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উদযাপনের নির্দেশ
- আলীকদমে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন আহত
- বান্দরবানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের মধ্যে গুলি বিনিময়,পাড়া প্রধানের লাশ উদ্ধার
- বাংলাদেশ হবে স্মার্ট আর আমরা হবো সবচেয়ে সভ্য জাতি:পার্বত্যমন্ত্রী
- বান্দরবানে ইয়াবাসহ আটক ২
- থানচি বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, পুড়ে ছাই অর্ধশতাধিক দোকান
- বান্দরবানের রুমায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কেএনএফ এর গোলাগুলি
- বান্দরবানের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে কফি
- রুমাতে দূর্ঘটনার স্থান পরির্দশনে জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিদল
- লামাতে গলায় ফাঁসি দিয়ে মেডিকেল অফিসারের আত্মহত্যা
- ৯৬শতাংশ কাজ শেষ,৭৩বছর পর ট্রেন যাচ্ছে দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দরে
- থানচিতে জাতির পিতা ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন
- বান্দরবানে সনাতনী সম্প্রদায়ের গঙ্গা পূজা ও বারুনী স্নান সমাপ্তি
