বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ১১ ১৪৩১
|| ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২০
রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভুষণছড়া ইউনিয়নের এরাবুনিয়া গ্রাম। গ্রামের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে কর্নফুলী। গত বছরও এ নদীর দু পাড়ে দেখা গিয়েছিল বিস্তৃর্ণ তামাক ক্ষেত। কিন্তু এবার দেখা মিলছে সূর্যমুখী ফুল। ফুটফুটে এসব সূর্যমুখী ফুল যেন বদলে দিয়েছে এরাবুনিয়া গ্রামটির চিত্র। চোখ আটকে যাচ্ছে সূর্যমুখী বাগানে। এ ফুল দেখতে যাচ্ছেন স্থানীয়রা।
এরাবুনিয়ায় জসিমের সূর্যমুখী ফুলের বাগানে সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি গাছে ফুটেছে সুর্যমুখী। এ ফুল থেকে ও ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছিরা। ফুল বাগানে ছবি তুলছে অনেকে।
সূর্যমুখী ফুল চাষী মো.জসিম উদ্দিন (৫৫)। তিনি বলেন, এবছর তিনি কর্ণফুলী নদীর পাড়ে প্রায় দুই একর জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এক সময় এ জমিতে তামাক চাষ করতাম। দিন রাত তামাক ক্ষেতে লেগে থাকতে হয়। এ কাজ করতে গিয়ে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়েছে। ডাক্তার দেখাতে নিয়ে ডাক্তার বলেছেন তামাক ক্ষেতের বিষ স্ত্রীর শরীরে ক্ষতি করেছে। তার চিকিৎসার জন্য এ যাবত ৭০ হাজার টাকা খরচ করেছি। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। তাই মনের দুঃখে তামাক চাষ ছেড়ে দিয়েছি। আমার পরিবারকে ধংস করে দিচ্ছিল এ তামাক।
কৃষি বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ চেয়েছি। তারা সূর্যমূখী ফুল আর ভুট্টাসহ অন্যান্য সবজি চাষে পরামর্শ দিয়েছেন।আমাকে ভুট্টা ও সুর্যমুখী ফুলের বীজ দিয়েছেন তারা। আল্লাহ দিলে এবার ফুলের বীজ বিক্রি করে ১ লাখ টাকা পাব। বীজ ক্রেতাও ঠিক করে রেখেছি। আর ভুট্টা বিক্রি করে ২ লাখের অধিক টাকা পাব বলে আশা করছি।
জসিম উদ্দিন বলেন, তামাক চাষে কোন লাভই নেই। সবজি চাষ করলে ৫শ, ১ হাজার করে শেষে লাখ টাকা পাওয়া যায়। আর তামাক ১ লাখ টাকার খরচ আর হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম একেবারে শেষে একসাথে ৫০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। ৫০ হাজার লোকসান থাকে। এ তামাক কোম্পানী ছাড়া আর কেউ কিনে না। কোম্পানী যত টাকা নির্ধারণ করে সে দরে বিক্রি করতে হয়। এ হল তামাক চাষের ফল।
তামাক চুল্লিতে প্রচুর কাঠ পোড়াতে হয়। এ কাঠ ধংস করে স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ। তামাক চুল্লির আগুন দিনরাত পাহাড়া দিতে হয়। একটু এদিক সেদিক হলে পুরো চুল্লির তামাক পাতা শেষ হয়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, তামাকের ক্ষতি বুঝতে পেরে জসিম উদ্দিন আমার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করেন। তাকে ভুট্টা এবং সূর্যমুখী ফুল চাষ করতে পরামর্শ দিয়েছি। এ বছর সে ৭ একর জমির মধ্যে দুই একর জমিতে সূর্যমুখী, দুই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেন। সুর্যমুখী বীজ নিজে সংগ্রহ করে দিয়ে তা বিনামুল্যে বিতরণ করেছি। ফুলের বীজ যেন বাজারে বিক্রি করতে পারে সে ব্যবস্থাও করেছি। সূর্যমুখী প্রতিটি ফুল থেকে ২০০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম পর্যন্ত বীজ পাওয়া যাবে। সে এ বছর সর্বনি¤œ দুই টন বীজ পাবে। বীজের সর্বনি¤œ বাজার মুল্য ৪৫ টাকা। সে হিসেবে তিনি লাখ টাকা পাবেন শুধু সূর্যমুখী থেকে। জসিম আসলে একজন আদর্শ কৃষক বলেন পবন।
এরাবুনিয়া গ্রামের কৃষক মো ইউনুস (৫০) বলেন, আগামী বছর আমিও সূর্যমুখী ফুলের চাষ করব। তামাকের ক্ষতির দিকটি এলাকার মানুষ বুঝতে পেরেছে। এ বছর তামাক চাষের এলাকা গত বছরের চেয়ে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সবজি, তৈলবীজ ও দানাদার শষ্যর বাজারজাত ব্যবস্থার উন্নতি হলে এ এলাকা থেকে তামাক পুরোপুরি কমবে। ভুষণছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ বলেন, এলাকার মানুষ এ পর্যায়ে এসে তামাকের ক্ষতির দিক বুঝতেছে। আমরাও নিরুৎসাহিত করছি। কৃষি বিভাগের সাথে কৃষকদের সমন্বয় করে দিচ্ছি। আমরা চাই ভুষণ ছড়া ইউনিয়ন থেকে তামাক পুরোপুরি উঠে যাক।
এরাবুনিয়া এলাকার কৃষি উপ সহকারী অনুপ কুমার দত্ত বলেন, এলাকার কৃষকরা এবার সুর্যমুখী সহ অন্যান্য সবজি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। আমিও এ এলাকায় তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করছি যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে এ এলাকায় প্রচুর সবজি উৎপাদন হবে। আমরা কৃষকদের সবজি চাষে বিভিন্ন কৃষি পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়