হেফাজতি আদর্শের বিলুপ্তি চাই
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২১
‘হেফাজতে ইসলাম’-এর নামের মধ্যেই একটা বিভ্রম আছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান। আবহমানকাল ধরেই এ অঞ্চলের মানুষ পাস্পরিক শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বসবাস করে আসছে। সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে, এটাই এ অঞ্চলের মানুষের অন্তর্নিহিত বিশ্বাস ও শক্তি। হেফাজত সেই শক্তিতেই আঘাত হানতে চেয়েছিল। তাদের নাম শুনলে যে কারো মনে হতে পারে, বাংলাদেশে বুঝি ইসলাম অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল!
হেফাজতে ইসলামের কমিটির বিলুপ্তিতে যারা উল্লসিত, আমি তাদের দলে নই। নিজেদের অবিমৃশ্যকারিতা এবং তার ফলশ্রুতিতে সরকারের চতুর্মুখী চাপে আপাতত একটু কোণঠাসা হলেও তাদের যা চরিত্র, সুযোগ পেলেই আবার ছোবল হানবে হেফাজত। তবে তাদের কোণঠাসা থাকার সময়েই তাদের আদর্শিক বিলুপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেটা করতে হবে ইসলামের স্বার্থে, বাংলাদেশের স্বার্থে, মানুষের মানবিক মর্যাদার স্বার্থে।
২০১০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম হলেও হেফাজতে ইসলামের উত্থান ২০১৩ সালের ৫ মে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নারীনীতি, শিক্ষানীতির বিরোধিতা করে আসছিল হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালে আলোচনায় আসে তাদের ভয়ংকর ১৩ দফা। ১৩ সংখ্যাটি এমনিতেই অশুভ। কিন্তু হেফাজতের ১৩ দফা দেখার পর আমি বুঝেছি অশুভ কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী! এই ১৩ দফা আসলে ছিল বাংলাদেশকে অন্ধকারে নিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে। আর হেফাজতে ইসলামের অস্তিত্বটাই সাম্প্রদায়িক। হেফাজতে ইসলাম সংগঠনটিই তাই বাংলাদেশের মূল চেতনাবিরোধী।
‘হেফাজতে ইসলাম’-এর নামের মধ্যেই একটা বিভ্রম আছে। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান। আবহমানকাল ধরেই এ অঞ্চলের মানুষ পাস্পরিক শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বসবাস করে আসছে। সব ধর্মের মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ধর্ম পালন করতে পারবে, এটাই এ অঞ্চলের মানুষের অন্তর্নিহিত বিশ্বাস ও শক্তি। হেফাজত সেই শক্তিতেই আঘাত হানতে চেয়েছিল। তাদের নাম শুনলে যে কারো মনে হতে পারে, বাংলাদেশে বুঝি ইসলাম অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল! তাই ইসলামকে হেফাজত করার ‘মহান’ ব্রত নিয়েই তারা মাঠে নেমেছে। কিন্তু ঘটনা একদমই উলটো। বরং হেফাজত আবির্ভূত হয়েছে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে। ইসলামের যে শান্ত, সৌম্য ভাবমূর্তি তা হেফাজত অল্প কয়েক বছরেই ধূলিস্যাৎ করে দিতে পেরেছে। হেফাজত মানেই সংঘাত, তাণ্ডব, ঘৃণা, উস্কানি; হেফাজত মানেই পরমতবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ। কিন্তু ইসলাম মানেই শান্তি, ভালোবাসা, পরমতসহিষ্ণুতা, নারীর অধিকার সমুন্নত রাখার চেষ্টা। তাই বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে, হেফাজত মানেই ইসলাম নয়, বরং হেফাজত হলো ইসলামের শত্রু। গত কয়েকবছরে বাংলাদেশে ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা করেছে হেফাজত। এ দেশে ইসলামের সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা অবশ্য করেছে জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ। একাত্তরে তারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে। ধর্মের নামে হত্যা, ধর্ষণ, লুট করেছে। স্বাধীনতার পর ইসলামের সেই ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে অনেক সময় লেগেছে।
মোটামুটি যখন ইসলাম তার স্বমহিমায় উজ্জ্বল, তখনই সেই স্বাধীনতাবিরোধীদেরই উত্তরসূরি হেফাজতে ইসলাম এসে আবার ইসলামের নামে দেশকে পিছিয়ে নিতে চায়। তাই বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার স্বার্থে, ইাসলামের স্বার্থেই হেফাজতকে রুখতে হবে।
ইসলামের নামে তালেবানরা আলোকিত আফগানিস্তানকে অন্ধকার আফগানিস্তান বানিয়ে ফেলেছে। হেফাজত বাংলাদেশকেও তেমন অন্ধকারের দিকে ঠেলে নিতে চাইছে। হেফাজত সাধারণ মানুষের জন্য ইসলামকে কঠিন করে তুলতে চাইছে। এটা করা যাবে না, সেটা করা যাবে না; এসব বলে বলে তারা ইসলাম সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে চাইছে। নারী সম্পর্কে হেফাজদের ভাবনাটাই ভয়য়ংকর। নারী তাদের কাছে নিছক ভোগের বস্তু। স্বামীর মনোরঞ্জন আর সন্তান পালন ছাড়া হেফাজতের চোখে নারীদের আর কোনো উপযোগিতা নেই। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আল্লামা শফি নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তাদের ফোর-ফাইভের বেশি না পড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। নারীদের গার্মেন্টসে কাজ করাকে তুলনা করেছিলেন জেনার সঙ্গে। আল্লামা শফি তবু মুখে বলেছিলেন, আর তার উত্তরসূরি মামুনুল হক তো নারীদের ভোগের বস্তুতেই পরিণত করেছিলেন। কী ভয়ংকর কথা। হেফাজত থাকলে বাংলাদেশ থাকবে না। নারীদের এই অবমাননা কোনোভাবেই ইসলামসম্মত হতে পারে না।
শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্বই ক্রমশ জ্ঞান-বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। পুণ্যভূমি সৌদি আরবেও এখন বইছে প্রগতির হাওয়া। নারীরা গাড়ি চালাতে পারছে, স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখতে পারছে। এমনকি সৌদি আরবের পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত হচ্ছে রামায়ণ-মহাভারত। আর হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকের সাম্প্রদায়িকীকরণ করা হয়েছে। হেফাজত শুধু প্রগতির শত্রু নয়, ইসলামের শত্রু নয়; হেফাজত শিক্ষার শত্রু, সংস্কৃতির শত্রু, বিজ্ঞানের শত্রু, শিল্পের শত্রু।
আমাদেরই কিছু মানুষের ভুলে হেফাজতের উত্থান ঘটেছিল। একসময় বাংলাদেশের নাটক-সিনেমায় খারাপ মানুষের চরিত্র বলতেই ছিল দাড়ি-টুপিওয়ালা মানুষ। এটা হয়েছিল, ধর্মের নামে স্বাধীনতাবিরোধিতার কারণে। আবার বাংলাদেশের কিছু তথাকথিত প্রগতিশীলদের মূল টার্গেট ছিল ইসলাম। ইসলামকে গালি দেয়া মানেই যেন ছিল আধুনিকতা।
অল্পকিছু মানুষের এই ইসলামবিদ্বেষের ফাঁক গলেই দেশে হেফাজতের উত্থান। কিন্তু ২০১৩ সালের পর হেফাজতের সঙ্গে সরকারের ‘আঁতাতের’ সুবাদে দাড়ি-টুপি থাকলেই একধরনের ছাড় পাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়। ইসলামি লেবাসধারীদের যা ইচ্ছা তাই করার, যা ইচ্ছা তাই বলার স্বাধীনতা তৈরি হয়। ওয়াজের নামে এই হেফাজতিরা দেশে ঘৃণা আর অশ্লীলতার বিস্তার ঘটান। তাদের জন্য যেন কোনো আইন ছিল না। দেশে লোকজ-সংস্কৃতির পথ ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে আসে, তার জায়গা নেয় অশ্লীল ওয়াজ। ইসলামের নামে এই ওয়াজই হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষের বিনোদন। যাত্রার চর্চা নেই, লোকজ গান-সংস্কৃতির বিকাশ নেই। শিশু-কিশোর সংগঠনগুলোও যেন অসহায় আত্মসমর্পণ করে। এখন সময় এসেছে, আবার আবহমান বাংলার সংস্কৃতির বিকাশ ঘটানোর। শিশুদের মানবিক বিকাশ ঘটানোর।
হেফাজতের নেতারা নিজেরা সব অপকর্ম করেন। আর মাদ্রাসা ছাত্রদের শেখান এই দুদিনের দুনিয়া কিছু নয়। কিছু মাদ্রাসা পরিণত হয় বিকৃত যৌনতার আখড়ায়। শিশুরা দিনের পর দিন অসহায়ভাবে শিক্ষকদের হাতে নির্যাতিত হতে থাকে। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। মাদ্রাসার শিশুদের বোঝাতে হবে, অবশ্যই আখেরাতের জন্য ভালো কাজ করতে হবে। কিন্তু আল্লাহ যে কারণে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তাও করতে হবে। শুধু পরকালের জন্য অপেক্ষা নয়, এই পৃথিবীর জন্যও সবার কিছু না কিছু করার আছে। সবাই নিজ দায়িত্ব পালন করে পৃথিবীকে আরও মানবিক ও বাসযোগ্য করে তুলতে হবে সব ধর্মের, সব মানুষের জন্য।
হেফাজতের কমিটি বিলুপ্তির পাশাপাশি তাদের আদর্শিক বিলুপ্তিও নিশ্চিত করতে হবে। এই কাজটা শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয়। শুধু হেফাজতের নেতাদের ধরলে হবে না, তারা যাতে আর কখনও ইসলামের নামে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়াতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দিতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা বাড়াতে হবে। ইসলামের শান্তির বাণী পৌঁছে দিতে হবে সবার মাঝে, তাদের দেখাতে হবে ইসলামের আসল পথ, ইসলামের সৌন্দর্য।
লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক
- লামা ফাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১২ ইউপি সদস্যদের অনাস্থা
- রুমা ও বিলাইছড়ি উপজেলা সীমান্তে গোলাগুলি
- বান্দরবানে অপহৃত সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি
- প্রাণী ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক
- মন্ত্রী-এমপির প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ
- চালের বস্তায় জাত, দাম উৎপাদনের তারিখ লিখতেই হবে
- ৫০ বছরে দেশের সাফল্য চোখে পড়ার মতো
- সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আসছেন আরও ৪ লাখ মানুষ
- বঙ্গবন্ধু টানেলে পুলিশ-নৌবাহিনী-ফায়ার সার্ভিসের জরুরি যানবাহনের টোল মওকুফ
- বাংলাদেশে দূতাবাস খুলছে গ্রিস
- রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে ক্যাশলেস পদ্ধতিতে যাচ্ছে এনবিআর
- কাতারের আমির আসছেন সোমবার
- এবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল যাবে পাইপ লাইনে
- কেএনএফ সদস্যদের আদালতে হাজির-দুই দিন করে চার দিনের রিমান্ড
- মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
- মুজিবনগর দিবস : সব অপশক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার
- পর্যটন শিল্পের বিকাশে কুয়াকাটায় বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ
- হাওরে কৃষকের মুখে স্বর্ণালি হাসি
- সর্বজনীন পেনশন প্রসারে ৮ বিভাগে মেলা
- জলবিদ্যুতে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আহ্বান নেপালের
- এক সফটওয়্যারের আওতায় সব সরকারি চাকরিজীবী
- দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
- ‘মাই লকারে’ স্মার্টযাত্রা
- মাঠ প্রশাসন সামলাতে হার্ডলাইনে সরকার
- থানচি সাংগ্রাইং মৈত্রী পানি বর্ষন উৎসব
- বাইশারীতে টিসিবির পণ্য পেয়ে মহা খুশি উপকারভোগীরা
- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোন সশস্ত্র সংগঠন থাকবে না - র্যাব মহাপরিচালক
- মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
- মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- কেএনএফ সদস্যদের আদালতে হাজির-দুই দিন করে চার দিনের রিমান্ড
- থানচি সাংগ্রাইং মৈত্রী পানি বর্ষন উৎসব
- লামায় ইটভাটায় অভিযান জরিমানা আদায়
- রুমায় যৌথ অভিযানে কেএনএফ এর ৯ সদস্য আটক অস্ত্র উদ্ধার
- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোন সশস্ত্র সংগঠন থাকবে না - র্যাব মহাপরিচালক
- বেঁচে গেলেন শতাধিক যাত্রী
- কিস্তির সময় পার হলেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে ঋণ
- প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি জামায়াত নেতারাও
- অবৈধ অনলাইন পোর্টালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
- জলবিদ্যুতে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আহ্বান নেপালের
- আপাতত মার্জারে যাচ্ছে ১০ ব্যাংক, এর বাইরে নয়: বাংলাদেশ ব্যাংক
- ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১০.৪৩ শতাংশ
- এক সফটওয়্যারের আওতায় সব সরকারি চাকরিজীবী
- নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে দুই মিয়ানমার সেনা বাংলাদেশের আশ্রয়ে
- বাইশারীতে টিসিবির পণ্য পেয়ে মহা খুশি উপকারভোগীরা
- বিভেদ মেটাতে মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারা
- মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা
- বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও সোয়া লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি
- রেমিট্যান্সে সুবাতাস, ১২ দিনে এলো ৮৭ কোটি ডলার