শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ২০ ১৪৩১
|| ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২০
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর নিজ বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিকতা ও সহমর্মিতায় মুগ্ধ বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাহবুব হাসান। চিকিৎসার ব্যাপারে সিনিয়র অফিসারদের সার্বক্ষণিক তদারকি, মানসিক সহযোগিতা, তার সুস্থ হওয়ার পথকে আরও সহজ করেছে বলে মনে করেন তিনি। শুধু তার ক্ষেত্রে নয়, করোনায় আক্রান্ত সকল পুলিশ সদস্যের পাশে এভাবে সেবার হাত প্রসারিত করে কাজ করছেন নিজ বাহিনীর সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতনরা। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সঠিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল, অন্যান্য সরকারি হাসপাতাল এবং একটি প্রাইভেট হাসপাতাল ভাড়া করে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ আগস্ট পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬ হাজার ৫৫০ জন পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৪ হাজার ৯৪৬ জন এবং প্রাণ হারিয়েছেন ৭১ জন। বাকি এক হাজার ৫৩৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। করোনায় কোনও চিকিৎসা না থাকায় এর বিভিন্ন উপসর্গের চিকিৎসা করলেই একজন স্বাভাবিক মানুষ দুই বা তিন সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। করোনা আক্রান্তদের মানসিক সাপোর্ট জরুরি জানিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে মানসিকভাবে চাঙা রাখা ভীষণ প্রয়োজন। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি যদি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তাহলে এটা তার শরীরেও প্রভাব ভেলে। শরীরকে আরও দুর্বল করে রাখে।’ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে একাধিক টিম প্রতিদিন করোনা আক্রান্তদের ভিজিট করছে বলে জানা গেছে। একজন যুগ্ম কমিশনারের নেতৃত্বে টিমের সদস্যরা আক্রান্তদের চিকিৎসার খোঁজ নেন, কারও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সে ব্যবস্থা করেন। এছাড়া কোথাও চিকিৎসার অবহেলা হলে তা সমাধান করে যাচ্ছেন টিমের দায়িত্বশীলরা। করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যের তদারকি করতে গিয়েও অনেক পুলিশ কর্মকর্তা নিজেরাও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনি একজন হলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসান ফিরোজ। করোনার এই সময়ে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি আক্রান্তদের সেবায় নিজেদের কাজের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা, খাবার থেকে শুরু করে যার যে সহযোগিতা প্রয়োজন হয়েছে তা দেওয়ার জন্য আইজিপি স্যারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। প্রতিদিন একজন যুগ্ম কমিশনার স্যারের নেতৃত্বে একটি টিম স্বশরীরে গিয়ে করোনা আক্রান্তদের খোঁজখবর নেয়। পর্যাপ্ত সুরক্ষা নিয়ে তারা এই ভিজিটগুলো করে। এর মাধ্যমে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। এটাই হল অন্যতম লক্ষ্য। দায়িত্বে থাকা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতিদিন আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেন। তাদের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন কোথাও কোনও কিছুর ব্যত্যয় ঘটলে তা সমাধানের চেষ্টা করেন। মনিটরিংটা খুব দক্ষতার সঙ্গে করা হচ্ছে। যা অনেক সময় বাইরে থেকে বোঝা যায় না কিন্তু এর ফলাফল অনেক ভালো।’ আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের বাড়তি সেবার বাইরে অন্যদের পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের ব্যারাকগুলোর খাবারের মেন্যুতের পরিবর্তন আনা হয়েছে। যুক্ত করা হয়েছে পুষ্টিকর খাবার। এছাড়া ফলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এর বাইরে করোনার এই সময়ে পুলিশ সদস্যরা যাতে আরও বেশি সুস্থ থাকতে পারেন সেজন্য যোগ-ব্যায়াম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে গুলশান পুলিশ। সহস্রাধিক পুলিশ সদস্যকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এই যোগ-ব্যায়াম প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। এক হাজারের বেশি সদস্য এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এখন তারা নিজেরাই সীমিত জায়গায় ব্যায়ামগুলো করতে পারছেন। যা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করছে।’ নিজ বাহিনীতে আক্রান্ত সদস্যদের সেবায় পুলিশের উদ্যোগ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফরের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যেসব পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল এবং ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি বেসরকারি হাসপাতাল ভাড়া করে তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল ঢাকার প্রটোকলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়