শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৭ ১৪৩১
|| ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২ মে ২০২৩
বান্দরবানে বর্তমান সরকারের শাসনামলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। অত্র জেলায় সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে সীমান্ত সড়ক, আন্ত:জেলা-আন্ত:উপজেলা সড়ক সহ বান্দরবান-কেরানি হাট মহাসড়ক। পার্বত্যাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার এই উন্নয়ন দুর্গম পাহাড়ে বসবাসকারী জনসাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের পাশাপাশি জীবনযাত্রায় এনেছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বান্দরবান জেলায় বর্তমান সরকারের চলমান এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার প্রধান অন্তরায়, ভূঁইফোড় এক সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) যার মূল উদ্যোক্তা উচ্চাভিলাষী নাথান লনচেও বম।
কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সরকারি এসব পাকা রাস্তা প্রতিনিয়ত খুঁড়ে অথবা ফুট ওভার ব্রীজের স্লাপ ভেঙ্গে রাস্তার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন সহ স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত ব্যাহত করছে কেএনএফ এর সন্ত্রাসীরা। এতে স্থানীয় জনসাধারণের উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য পরিবহণ সহ স্বাভাবিক চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা, দিন দিন বেড়ে চলেছে জনদুর্ভোগ। এছাড়া, এসব রাস্তায় চলাচলকারী নিরীহ নাগরিককে গুলি করে হত্যা-জখম-অপহরন করা বা যানবাহনের ক্ষতি সাধনের ঘটনাও কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ঘটিয়ে চলেছে প্রায়শই। কেএনএফ এর এরূপ অপতৎপরতায় শান্তি ও সম্প্রীতির বান্দরবানের সহজ-সরল মানুষের মাঝে দিন-দিন বাড়ছে আতংক।
এদিকে, কেএনএফ এর সন্ত্রাসীদের সকল অপতৎপরতা রুখে দিতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বদ্ধপরিকর। সেনাবাহিনীর প্রবল আক্রমণে একের পর এক ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। বিভিন্ন পাড়ায় কেএনএফ সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি থাকা জনগণকে মুক্ত করে আনছে সেনাসদস্যরা। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা মেরামত করে স্থানীয়দের চলাচল ও পণ্য পরিবহনে স্বাভাবিকতা বজায়ে প্রতিনিয়ত নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে ইসিবি'র সদস্যরা। দূর্গম পাহাড়ি পাড়ায় কেএনএফ এর সন্ত্রাসীদের অত্যাচার ও নিপীড়ণের শিকার অসহায় মানুষের কাছে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছে দিতে ছুটে যাচ্ছে অকুতোভয় সেনাসদস্যরা। রোয়াংছড়ির প্রত্যন্ত এক এলাকায় এমনই এক চিকিৎসা সহায়তা দলের সাথে কাজ করতে গেলে মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মিজানকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা কেএনএফ এর কিছু কাপুরুষ সন্ত্রাসী। বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসনও মানবতার সেবায় সেনাবাহিনীর সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে চলেছে। কেএনএফ সন্ত্রাসীদের অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে পালিয়ে যেসব সর্বহারা নিপীড়িত মানুষ আশ্রয়ের আশায় শহরাঞ্চলে চলে আসছে, তাদের পাশে বন্ধুর মতো দাড়াচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। শরনার্থীদের পাড়াগুলো কেএনএফ এর সন্ত্রাসীদের দখলমুক্ত করে পালিয়ে আসা জনসাধারণকে পুনরায় তাদের পৈতৃক আবাসস্থলে ফিরিয়ে দেওয়া অবধি সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের এই ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছে স্থানীয় সুধীজনেরা।
কেএনএফ এর সন্ত্রাসীদের এহেন কার্যক্রম দেশদ্রোহিতার সামিল বলে আখ্যা দিচ্ছেন সমাজের সুধীমহল। নাথান বম সহ কেএনএফ সন্ত্রাসী বাহিনীর মূল হোতাদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার দাবী স্থানীয় সর্বসাধারণের।
সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেখে স্থানীয়রাও মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন, বান্দরবানের শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনতে সরকার একদিন নিশ্চিত সফল হবে। তারা এ-ও বিশ্বাস করে, নাথানের মত কিছু মুখোশধারীর ছলনায় মোহাবিষ্ট হয়ে যেসকল সহজ-সরল কুকি-চিন যুবকেরা বিপথগামী হয়েছে তারাও একদিন তাদের ভুল বুঝতে পেরে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইবে। জাতিও হয়তো বৃহত্তর স্বার্থে তাদের ক্ষমা করে দিয়ে ফিরিয়ে আনবে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় - যে মায়ের বুক আজ খালি হচ্ছে, যে নিরীহ ব্যক্তি আজ নির্যাতিত হচ্ছে, সে কি কোনদিন ক্ষমা করতে পারবে কেএনএফ এ যোগ দেওয়া বিপথগামী সেই অত্যাচারকারী যুবককে? দেশের উন্নয়ন কাজে যে ক্ষতি আজ কেএনএফ এর সন্ত্রাসীরা সাধন করছে তার ফলে কি আমরা উন্নয়নের দৌড়ে বিশ্বপরিমন্ডলে পিছিয়ে পড়ছি না? একজন খুনি-লুটেরা-অত্যাচারকারী আইন-আদালতের কাঠগড়ায় ক্ষমা পেলেও কি স্ব-বিবেকের কাঠগড়ায় কোনদিন ক্ষমা পায়?
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়