পার্বত্য চট্টগ্রামে মুরুং বাহিনীর ইতিহাস-ঐতিহ্য, গঠন,স্বীকৃতি,উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কর্ম-তৎপরতা
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ৬ মে ২০২৩

বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা ও আলীকদম উপজেলায় ‘মুরুং বাহিনী’ একটি ইতিহাসিক নাম। নামটি ভুলতে বসেছে অনেকে। এ বাহিনীর সশস্ত্র প্রতিরোধ ও সহায়তায় বান্দরবানের লামা-আলীকদমে আশির দশকে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নাস্তানাবুদ হয়ে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। মাঝে মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তৃতায় মুরুং বাহিনীর গৌরবময় অবদানের উচ্চারণ শোনা গেলেও কার্যত এ বাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতা ও উন্নয়নে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আলীকদমে মুরুং বাহিনীর অবিসংবাদিত নেতা বাবু মেনলে মুরুং দুরারোগ্যে রোগের করালগ্রাসে পতিত হয়ে দিনের পর দিন কষ্ট পেয়ে মারা গেলেও জীবদ্দশায় তার খোঁজ নেয়নি কেউ। ফলে হতাশ হয়ে ধীরে ধীরে বিলীন হওয়ার পথে এ বাহিনী। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে অনেকে আবার নবগঠিত এমএনপি বা মুরং ন্যাশনালিস্ট পার্টির মতো সন্ত্রাসী দলে নাম লিখিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরাতায় জড়িত হয়েছে। ইতিপূর্বের কয়েকটি ঘটনায় এর প্রমাণও পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু শিক্ষিত ও উচ্চাভিলাসী উপজাতী নেতৃবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলাদা অঞ্চল ঘোষণা করে নিজস্ব আইন পরিষদের অধীনে শাসন ও পরিচালনার জন্য স্বায়ত্বশাসনের দাবীতে অপতৎপর হয়ে উঠে। এই ধারাবাহিকতায় তাঁরা ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ সালে তাঁদের কতিপয় দাবী-দাওয়া নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাত করেন। এ সময় উপজাতীয় নেতারা পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে নিজস্ব আইন পরিষদের অধীনে পরিচালনা ও সংবিধানে তা অন্তর্ভূক্তির দাবী জানান কিন্তু একটি সদ্য স্বাধীন দেশে আলাদা একটি জাতি অঞ্চল গঠন ও পৃথক শাসনবিধির পরিকল্পনা বঙ্গবন্ধু কর্তৃক প্রত্যাখাত হয়। তৎসময়ের উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ বিয়ষটিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। ফলে সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় অর্থাৎ ২৪ জুন ১৯৭২ সালে গঠিত হয় ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি’। যা সংক্ষেপে ‘জেএসএস‘ বলে পরিচিত। পরবর্তীতে, ৬ মাস পর গঠিত হয় জেএসএস এর সশস্ত্র শাখা “শান্তি বাহিনী”।
এক সময় লামা-আলীকদম শান্তি বাহিনীর অভয়ারণ্য ছিল। তাদের অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন, হত্যা-লুণ্ঠন ও চাঁদাবাজিতে এতদাঞ্চলের পাহাড়ি-বাঙ্গালীরা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকত। রাতে শান্তিবাহিনীর ভয়ে লোকজন বাসা বাড়ীতে থাকতে পারতো না। শান্তি বাহিনী দ্বারা শুধু বাঙ্গালীরাই নয় মুরুংদেরও নানাভাবে অত্যাচারিত, নির্যাতিত এবং ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির শিকার হতে হতো। শান্তিবাহিনীর দাবী পূরণ করতে না পারলে মুরুংদেরকে জীবন দিতেও হতো।
মুরুংদের প্রথম আক্রমণের মুখে শান্তিবাহিনী ১৯৮৫ সাল। আলীকদমের মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্টের কচ্ছইপ্যা মুখের লোংরা পাড়ার ঝিন ঝিরিতে শান্তিবাহিনীর একটি আস্তানা ছিলো। এই আস্তানায় একদিন রাতের দ্বিপ্রহরের আধাঁরে মেনলে মুরুং এর নেতৃত্বে একটি দল দা, কুড়াল, লাঠিসোটা ও গাদা বন্দুক নিয়ে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। গাদা বন্দুকের একটি আওয়াজে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে জেগে উঠে যে যার মতো করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এক ধরণের বিনা বাধায় মেনলের দল ঐ আস্তানাটির দখলে নিয়ে নেয়। সেখান থেকে মুরং বাহিনী ১টি রাইফেল, ২টি এসএলআর, ১টি এলএমজি ও ৭৫০ রাউন্ড এমোঃ/ গুলি হস্তগত করে। মুরুং বাহিনীর প্রথম আক্রমণের পর অস্ত্র উদ্ধারের কারণে প্রাথমিকভাবে তাদের ছোট আকারের একটি অস্ত্র ভান্ডার গড়ে উঠে। এ আক্রমণে অস্ত্র ছাড়াও প্রায় ৫/৬ মন চাউল পেয়েছিলো মুরুংরা। প্রথম প্রতিরোধ আক্রমণের এই সাফল্য দেখে মুরুং বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে থাকলো।
ক। মুরুং বাহিনী গঠন প্রক্রিয়া।
এই আক্রমণের ধারাবাহিকতায় মুরুংরা নিজেদের নিরাপত্তা ও মা-বোনদের সম্ভ্রম রক্ষার্থে একতাবদ্ধ হয়ে শান্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুরুংদের এই সাহসিকতা দেখে এদের পাশে এসে দাঁড়ায় বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এদের সহায়তায় স্বেচ্ছাসেবক দল হিসেবে বিগত ১৯৮৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর আলীকদম সদরে বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবক দল হিসেবে ‘মুরুং বাহিনী’ গঠিত হয়। তাদের প্রথম পোষাক ছিল লাল রং এর এবং স্থানীয়রা তাদেরকে ‘লাল বাহিনী’ কিংবা ‘গরম বাহিনী’ হিসেবে ডাকতো।
খ। যাদের নেতৃত্বে মুরুং বাহিনীর সংগঠিত।
মুরুং বাহিনী গঠন প্রক্রিয়ার সাথে আলীকদম ও লামা উপজেলায় প্রথমে যাঁরা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের মধ্যে যথাক্রমে দুক্কা মুরুং, মেননাও মুরুং, আনাচরণ ত্রিপুরা, পাখি মগ, রেনক্রি মুরুং, মেনলে মুরুং, প্রেনএ মুরুং, হমকাম মুরুং, মেনরাই মুরুং, পারাও মুরুং (বলি), রেংচু মুরুং, বোলাই মুরুং, লাংগি কমান্ডার, রাংক্লাং মুরুং, তংলক মুরুং মেম্বার, চমবট মুরুং, সেক্সে মুরুং ও মাংরূম মুরুং প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। আরও অনেকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে এ বাহিনী গঠন ও তাদের কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণে সহযোগিতা করে।
গ। সরকারিভাবে স্বীকৃতি।
মুরুং বাহিনী গঠনোত্তর এ বাহিনীর সদস্যরা সরকারি স্বীকৃত আনসার-ভিডিপিতে স্বেচ্ছায় যোগ দিয়ে এলাকার জনগণের জান-মালের নিরাপত্তাসহ নিজেদের ও অন্যান্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তোলে।
ঘ। মুরুং বাহিনী গঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমুহ এই বাহিনীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ ছিল নিম্নরূপঃ
১) দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বসবাসরত উপজাতিদের নিরাপত্তা দান।
২) এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলার রক্ষার্থে সেনা বাহিনী, বিডিআর, পুলিশ ও আনসার-ভিডিপিদের সহায়তা প্রদান।
৩) সরকারী-বেসরকারী সুবিধা বঞ্চিত দুর্গম পাহাড়ি এলাকার পশ্চাৎপদ মুরুং উপজাতীয়দের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সার্বিক উন্নয়নে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সাধন ও দাবী-দাওয়া আদায়।
৪) পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন।
৫) স্থানীয় উপজাতি ও বাঙ্গালীদের মধ্যে সহাবস্থান, ভ্রাতৃত্ববোধ ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পরিবেশ উন্নত করা।
৬) এলাকার সন্ত্রাসী, দুষ্কৃতিকারী, চাঁদাবাজদেরকে দমনে সেনা বাহিনীকে সহায়তা করা।
৭) সরকার প্রদত্ত মৌলিক সুযোগ-সুবিধা ও বিভিন্ন পরিসেবাগুলি তৃণমূল পর্যায়ের উপজাতীয়দের নিকট পৌঁছাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করা।
৮) ১৯৭৬ সাল পরবর্তী লামা-আলীকদমের বিপদগামী উপজাতীয়দেরকে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে তাদের আত্মকর্মসংস্থান, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পুনর্বাসন ও সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
৯) স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙ্গালীদের মধ্যে মৈত্রীর সম্পর্ক স্থাপনে সহায়তা করা।
১০) লামা-আলীকদমে পৃথক দু’টি মুরুং কমপ্লেক্স স্থাপন করে মুরুং উপজাতি ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ও সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখা।
১১) প্রতিবছর লামা ও আলীকদম উপজেলায় সেনা বাহিনীর সহায়তায় পৃথক দু’টি বার্ষিক সম্মেলন (মুরুং সম্মেলন) এর মাধ্যমে তাদের কর্মকান্ডের সফলতা-ব্যর্থতা নিরূপণ করে ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের রূপরেখা তৈরী করা।
ঙ। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে যাদের অবদান।
বাস্তবায়নের সুফল হিসেবে ১৯৮৬ সাল থেকে লামা ও আলীকদম উপজেলাকে শান্তি বাহিনী মুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন ৩য় বেঙ্গল এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল শাহ জাহান মিয়া। তাঁর সহায়ক হিসেবে ছিলেন ৩য় বেঙ্গলের উপ-অধিনায়ক বর্তমান অবসরপ্রাপ্ত লেঃ জেনারেল আঃ তঃ মঃ জহিরুল আলম, পিএসসি, এনডিসি ও তৎকালীন লামার সাব-জোন কমান্ডার বর্তমান অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম গোলাম রব্বানীসহ তৎসময়ের অত্র লামা-আলীকদম উপজেলায় কর্মরত সেনা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সৈনিকবৃন্দ।
চ। মুরুং বাহিনী গঠনে আরও যারা অবদান রেখেছিল।
মুরুং বাহিনী গঠনে উপরোক্ত সেনা অফিসারদের পাশাপাশি আরও যারা অবদান রেখেছেন তাঁদের মধ্যে সাবেক লামা উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম আলহাজ্ব আলী মিয়া, সাবেক আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবু জাফর বি এ, বি-এড, তৎকালীন আলীকদম সদর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আলীমুদ্দিন, মরহুম খুইল্যা মিয়া, আলহাজ্ব গুরা মিয়া, লামার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মরহুম আব্দুল মালেক চৌধুরী, ২নং চৈক্ষ্যং ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আহমদ কবির, গজালিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ম্রাথোয়াই অং চৌধুরী, লামার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আমির হোসেন মজুমদার ও লামার সরই ইউপি’র সাবেক সদস্য তংলক মুরুং মেম্বার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। পাশাপাশি মুরুং বাহিনী গঠনে স্থানীয় মার্মা উপজাতিদের মধ্যে ২৮৮নং আলীকদম মৌজার হেডম্যান প্রয়াত থোয়াই উগ্য মার্মা, ২৯২নং চাইম্প্রা মৌজার হেডম্যান চাথুই প্রু মার্মা, ২৮৭নং তৈন মৌজার হেডম্যান হ্লাঅং মার্মা ও ২৮৯নং চৈক্ষ্যং মৌজার হেডম্যান প্রয়াত মংবাচিং মার্মা প্রমুখের অবদান স্মরণীয়।
ছ। মুরুং বাহিনীকে দমিয়ে রাখতে প্রতিরোধ
মুরুং বাহিনী গঠন হওয়ার পর শান্তিবাহিনীর পক্ষ থেকে মুরুং নিধনের জন্য ব্যাপক ভিত্তিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। ফলে রাতে দিনে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় শান্তিবাহিনী মুরুং পল্লীতে হানা দিতে থাকে। তখন মুরুং বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের পাড়ায় বাংকার সৃষ্টি ও চলাচল পথে বিশেষ পদ্ধতিতে ‘বাঁশকল’ নামে এক ধরণের ফাঁদ তৈরী করতো। ফলে বাঁশকলের ভয়ে পাহাড়ি এলাকায় রাস্তা দিয়ে সহজভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা চলাচলে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতো।
জ। মুরুং বাহিনী গঠনোত্তর কর্মতৎপরতা।
মুরুং বাহিনীর সদস্যরা ১৯৮৫ সাল পরবর্তীতে সেনা বাহিনীর সহায়তায় লামা-আলীকদমে উপজাতিদের শিক্ষা, চিকিৎসা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় উৎসব, জুম চাষের পরিবর্তে ফলের বাগান, রাস্তা-ঘাট উন্নয়ন ও সংস্কারে ব্যাপক অবদান রাখে। মুরুং সমাজের দরিদ্র ছেলে মেয়েদের বিবাহের খরচ যোগাতে সেনা বাহিনী প্রদত্ত আর্থিক সাহায্য পৌঁছাতো মুরুং বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়ক শক্তি হিসেবে নানা সমাজ সেবামূলক কাজে মুরুং বাহিনীর সম্পৃক্ততা দেখে দিন দিন এ বাহিনীর সুনাম সর্বমহলে ছড়িয়ে পড়ে। এ বাহিনীকে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আশির্বাদ হিসেবে স্থানীয়রা মনে করতে থাকে। যেখানে তথাকথিত শান্তি বাহিনীর ভয়বহ তাণ্ডব ও লুণ্ঠনযজ্ঞ চলছিল সেখানে মুরুং বাহিনী অমিত বীর বিক্রমে শান্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ফলে আশির দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে শান্তিবাহিনী কর্তৃক সৃষ্ট তাণ্ডবে অশান্তির আগুন জ্বলছিল সেখানে ১৯৮৪-৮৫ সালে সেনা বাহিনীর পক্ষ থেকে লামা-আলীকদমকে শান্তি বাহিনী ও সন্ত্রাসমুক্ত ‘শান্তির জনপদ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
আলীকদম জোন ও মুরুং বাহিনীর প্রচেষ্টায় স্থানীয়রা লামা উপজেলার তাও পাড়ায় একটি বেসরকারী রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়, গজালিয়া জুনিয়র হাইস্কুল (বর্তমানে হাইস্কুল), ফাঁসিয়াখালী জুনিয়র হাইস্কুল (বর্তমানে হাইস্কুল), রূপসী পাড়া হাইস্কুল এবং আলীকদম উপজেলায় রেপারপাড়ী আবাসিক বিদ্যালয়, চৈক্ষ্যং মৈত্রী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীকদম আদর্শ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৈত্রী উপজাতীয় আবাসিক বিদ্যালয়, কুরুকপাতা মৈত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। বর্তমানে এসব বিদ্যালয় বিভিন্ন কারণে নাম পরিবর্তন হয়ে গেছে। ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের সাথে শান্তিবাহিনীর রাজনৈতিক সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে সম্পাদিত ‘শান্তিচুক্তি’র ফলে সংগত কারণে মুরুং বাহিনীর কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। ফলে এরপর থেকে মুরুং বাহিনীর কর্মতৎপরতা কমতে শুরু করে।
ঝ। মুরুং বাহিনীর বর্তমান অবস্থা।
মুরুং বাহিনীর হারানো ঐতিহ্য ও জৌলুস এখন তেমন একটা চোখে পড়ে না। তারপরেও কতিপয় উদ্যমী, ত্যাগী ও দেশপ্রেমিক মুরুং যুবকরা মুরুং বাহিনীর নামটি বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সদা তৎপর। কিন্তু অবহেলা, উদাসীনতা, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ও বঞ্চনার কারণে এখনকার মুরুং বাহিনী তেমন সুসংগঠিত নয়। আলীকদমে মুরুং বাহিনীতে ১৭৭ জন সদস্য থাকলেও লামা উপজেলায় মুরুং বাহিনীর কার্যক্রম বিলুপ্তির পথে। ইতোপূর্বে বার্ষিক সম্মেলন হলেও এখন লামা উপজেলায় মুরুং সম্মেলন হচ্ছে না। তবে প্রতিবছর আলীকদমে সেনা জোনের সহায়তা ‘মুরুং সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আলীকদম মুরুং বাহিনীর কমাণ্ডার বাবু মেনদন বলেন- "মুরুং বাহিনীকে ধ্বংস করতে এবং এ সম্প্রদায়ের উন্নয়নকে ব্যাহত করতে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি আঞ্চলিক উপজাতীয় রাজনৈতিক সংগঠন তৎপর রয়েছে। ফলে যে মুরুং সম্প্রদায় এক সময় বাহিনী গঠন করে স্থানীয়/আঞ্চলিক /পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসকে লামা-আলীকদম থেকে সমুলে উৎখাতে সাহসী ভূমিকা রেখেছিল তারাই এখন অবহেলার কারণে ওদের কাছে আশ্রয় নিয়ে তাদেরই বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যোগদানসহ তাদের নেতৃত্বে নাম লেখাচ্ছে। জড়িত হয়ে পড়ছে ঐ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপে।
পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমানে লামায় সংগঠিত কোন মুরুং বাহিনী নেই। ফলে ‘লামা মুরুং কমপ্লেক্স’টি পূর্বের ন্যায় স্থানীয় মুরুং সমাজের উন্নয়নে কর্মতৎপরতা চালাতে পারছেনা। এক্ষেত্রে মুরুং বাহিনীর প্রতি বঞ্চনার চিত্রও ফুটে উঠে। মুরুং বাহিনীর প্রতি বঞ্চনা অব্যাহত থাকলে হয়ত এক সময় এ বাহিনীর অতীত অবদান পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে না।তাছাড়া সাহসী এই বাহিনীটি বিপথে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, মুরুং সম্প্রদায় বর্তমানে খ্রিষ্টান মিশনারীদের ধর্মীয় আগ্রাসনের টার্গেটে পরিণত হওয়ায় তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক পরিবেশ দিন দিন বিলুপ্তির পথে ধাবিত হচ্ছে।
ঞ। *মুরুং বাহিনীর অবদানে বিভিন্ন ব্যক্তির স্বীকারোক্তি"।
আলীকদম জোন সদরে অনুষ্ঠিত এক মুরুং সমাবেশে বান্দরবান রিজিয়নের সাবেক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির, পিএসসি বলেছেন- "পার্বত্যাঞ্চলের সন্ত্রাস নির্মূলে মুরুং বাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। মুরুং বাহিনীর সদস্যরা রক্ত দিয়ে সেনাবাহিনীর পাশে থেকেছেন। তাই মুরুং সম্প্রদায় সেনাবাহিনীর অকৃত্রিম বন্ধু। মুরুং বাহিনীকে পুনরুজ্জীবিত করে তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সর্বোত্তভাবে সহযোগিতা করা হবে। শিক্ষার উন্নয়নে মুরুংদের প্রচেষ্টাকে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সকল সুবিধা প্রদান করা হবে"। একই অনুষ্ঠানে আলীকদম জোনের সাবেক জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল আজিম উল্লাহ বাহার পিএসসি বলেন- "মুরুং বাহিনী পার্বত্যাঞ্চলের সন্ত্রাস নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছেন" এবং বিশিষ্ট মুরুং নেতা মেনলে মুরুং এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন- "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন"।
ত। মুরুং সমাজের উন্নয়নে যা করা প্রয়োজন।
পাহাড়ি উপজাতিদের মধ্যে সহজ, সরল জীবনে অভ্যস্ত এ সম্প্রদায় স্বাধীনতা পরবর্তী পার্বত্যাঞ্চলের রাষ্ট্রবিরোধী যুদ্ধাবসানে সরকারের মিত্রশক্তি হিসেবে আভির্ভূত হয়েছিলো। বিশেষ করে বান্দরবানের লামা-আলীকদম উপজেলায় শান্তির সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আজ একটি ম্রিয়মাণ প্রসঙ্গ। সরকার কর্তৃক মুরুংদের কল্যাণে নিন্মোক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করলে মুরুং সম্প্রদায়ের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে সহায়ক হতে পারেঃ
১) লামা-আলীকদম উপজেলায় সেনা জোনের তত্ত্বাবধানে সুবিধা বঞ্চিত মুরুং সম্প্রদায়ের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সুবিধার্থে আবাসিক সুবিধা প্রদানসহ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা।
২) উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী মুরুং ছেলে মেয়েদের সরকারী সহায়তা বৃদ্ধি করা।
৩) বেকার ও দরিদ্র মুরুং যুবক-যুবতিদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য পরিবেশবান্ধব বাগান ও বনায়ন সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদান করা।
৪) প্রতিটি মুরুং পল্লীতে সরকারী ব্যবস্থাপনায় স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষা কর্মসূচী পালন করা।
৫) মুরুংদের দরিদ্রতা বিমোচনের জন্য একটি পঞ্চ-বার্ষিকী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।
৬) মুরুংদের নিজস্ব ভাষা, বর্ণমালা ও সংস্কৃতিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষায় সরকারীভাবে আলাদা একটি মুরুং সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট গঠন করা।
৭) লামা-আলীকদমে সরকারীভাবে পৃথক দু’টি মুরুং ছাত্রাবাস ও আবাসিক বিদ্যালয় গঠন করা।
৮) মুরুংদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারীভাবে আলাদা একটি ‘মুরুং কল্যাণ ট্রাস্ট’ গঠন করা।
৯) মুরুং ভাষা ও বর্ণমালায় সরকারীভাবে পাঠ্যপুস্তক তৈরী করে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা।
১০) মুরুংদের জন্য আলাদা একটি ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে মুরুং ধর্মকে মিশনারীদের ধর্মীয় আগ্রাসন থেকে রক্ষা করা। সর্বোতভাবে তাদেরকে এনজিও’র খপ্পর থেকে মুক্ত করা।
১১) মুরুং নারীদের কল্যাণে বৃত্তিমূলক তাঁত প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষায় পৃথক একটি কর্মসূচী চালু করা।
পরিশেষে, বর্তমান সরকার দেশের জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ বিপর্যয় রোধ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য দেশী-বিদেশী সংস্থার অর্থায়নে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। মুরুং সম্প্রদায়ের বসবাস গভীর অরণ্যে ও উচুঁ পাহাড়ে বিধায় তাদেরকে উক্ত কর্মসূচীর আওতায় এনে বনায়ন, ফলজ বাগান, বাঁশ বাগান, মৎস্য চাষ ও গবাদি পশু পালনসহ পরিবেশবান্ধব কাজে তাদেরকে নিয়োজিত করা হলে দেশের পরিবেশ উন্নয়নের পাশাপাশি নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার ও প্রশাসন মুরুং বাহিনীকে কাজে লাগাতে পারে। এতে প্রাথমিকভাবে তাদের দারিদ্রতা বিমোচন ও চলমান অভাব-অনটন দুরীভুত করা সম্ভব।

- কে হচ্ছেন বান্দরবান পৌরসভার আগামীর নগর পিতা!
- বান্দরবান সেনানিবাসে বৃক্ষরোপন অভিযান শুভ উদ্বোধন
- বান্দরবান জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ভূমি ব্যাবস্থাপনায় হেডম্যানদের প্রশিক্ষণ
- প্রথমবারের মতো টাকায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ
- এনআইডি সংশোধন প্রক্রিয়া সহজ হচ্ছে
- ঋণখেলাপিরা উদ্যোক্তা হতে পারবেন না
- সৌদির লাল তালিকাভুক্তি এড়াল বাংলাদেশ
- ভূমি জরিপ আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক হবেন জেলা জজরা
- বাংলাদেশকে ‘এভিয়েশনের হাব’ হিসেবে দেখতে চায় এয়ারবাস: সালমান এফ রহমান
- পাইকারিতে ভারতীয় পেঁয়াজ ৪০ টাকা, দেশি ৫০
- সড়ক নিরাপত্তা ও কৃষির উন্নয়নে ৯২৬০ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক
- কেন্দ্রে অনিয়ম দেখলে ভোট গ্রহণ বাতিল: সিইসি
- বান্দরবানে প্রান্তিক পর্যায়ে সুধীজনের অংশগ্রহণে ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত
- আলীকদমে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে টমটম চালকের মৃত্যু
- লামায় সাইক্লোন সেন্টার স্টাটআপ সভা অনুষ্ঠিত
- বাংলাদেশ-ভারত সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ
- মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কৃষি পণ্যের মজুত গড়ার নির্দেশ
- ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস আজ
- রাজধানীতে বস্তিবাসীদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে ১০০১টি ফ্ল্যাট
- শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসের বিচার শুরু
- দুর্নীতিবাজদের ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ দুদকের
- লাইটহাউজ প্রকল্পে দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক
- রাজধানীর পরিবহন ব্যবস্থায় ঘটবে বিপ্লব
- স্বাভাবিক হচ্ছে পেঁয়াজের বাজার
- এলসি ছাড়াই আমদানি-রফতানি
- এলাকাভিত্তিক ধানের জাত: ৬ অঞ্চলে হচ্ছে ব্রি’র কার্যালয়
- লামায় সবুজায়নে "বনায়ন নার্সারি" পাহাড়ে পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে
- আলীকদমে সেচ্ছাসেবক লীগের কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
- রোয়াংছড়িতে আইনগত সহায়তা বিষয়ক উদ্বুদ্ধকরণ সেমিনার
- সরকার বয়স্কদের জন্য আন্তরিক - ডাঃ নিহার রঞ্জন নন্দী
- সাংবাদিকের মুখোশে বিচরণ করা কেএনএফ এর এক শীর্ষ নেতা রুমা থেকে গ্রেফতার
- অবশেষে আরও এক বীর সেনার আত্মবলিদানে দখল হলো সিলোপি পাড়া
- এবার কেএনএফ এর থিনদলতে ত্লাং ঘাঁটি সেনাবাহিনীর দখলে - দিশেহারা কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ছুটছে দিগ্বিদিক
- সেনা অভিযানে কেএনএফ এর ঘাঁটি দখল, বিপুল পরিমানে অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গোলাবারুদ উদ্ধার
- সড়কের পাশে পড়ে আছে মোটর সাইকেল চালকের লাশ
- বান্দরবানের থানচিতে কেএনএফ এর পুঁতে রাখা IED তে প্রাণ গেল আরো এক নিরীহ নির্মাণ শ্রমিকের!
- বান্দরবান পৌরসভা উপনির্বাচন মনোনয়ন জমা ও জেলা আওয়ামী লীগ এর জরুরি সভা
- সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলেন বান্দরবান রিজিয়নের নবাগত কমান্ডার
- আনসার ভিডিপি কার্যালয় পরিদর্শনে জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব
- বান্দরবানে সড়ক দূর্ঘটনায় ৬ জন আহত
- বান্দরবান জেলা পরিষদে সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ধীন সমাজসেবা বিভাগের নিয়োগপত্র হস্তান্তর
- মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন পার্বত্য মন্ত্রী
- আলীকদম হতে ২৮,৭০৫ পিস ইয়াবা উদ্ধার
- লামার ইয়াংছা খাল পুনঃখননে সুফল পাচ্ছে ১১ গ্রামের মানুষ
- লামায় প্রধানমন্ত্রীকে হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ
- কৃষ্ণচূড়ায় ছেয়ে আছে সড়কের দু`পাশ
- সেচ্ছাসেবক লীগের ত্রী-বার্ষিকী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
- বান্দরবানে বঙ্গবন্ধুর জুলি ও কুরি শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন
- লামায় সবুজায়নে "বনায়ন নার্সারি" পাহাড়ে পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে
- রোয়াংছড়িতে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ১ আহত ১ জন
