শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৫ ১৪৩০
|| ১৮ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৮ অক্টোবর ২০২০
চীনা কোম্পানির দরপত্র চূড়ান্ত
দেশে এবার বড় পরিসরে বায়ুবিদ্যুতের যাত্রা শুরু হচ্ছে। গত বছর শেষদিকে আইপিপি ভিত্তিক তিনটি বায়ুবিদ্যুতের দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এর মধ্যে একটি কোম্পানির দরপত্র চূড়ান্ত হয়েছে। চীনা এই কোম্পানিটির সঙ্গে ১৩ দশমিক ০৩ সেন্ট বা ১১ দশমিক ৭২৭ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুত কিনবে পিডিবি।
টেকসই নবায়নযোগ্য জ¦ালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, চীনা কোম্পানি এনভিশনের সঙ্গে শীঘ্রই কেন্দ্রটি স্থাপনের জন্য চুক্তি হবে। কেন্দ্রটি হবে দেশের সর্ববৃহৎ বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র। এখন দেশে চট্টগ্রামের কুতুবদিয়া এবং ফেনীর সোনাগাজিতে দুটি বায়ুবিদ্যুতের পাইলট প্রকল্প রয়েছে। এছাড়া দেশের আর কোথাও বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নেই। তবে গত বছর বিদেশী প্রতিষ্ঠানের করা উইন্ড ম্যাপিং বা বায়ু মানচিত্র বলছে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তা কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন নতুন যে কোন প্রযুক্তি সম্প্রসারণে শুরুতে একটু দেরি হলেও পরে কোন সমস্যা হয় না। কাজটি একবার শুরু করাই কঠিন। এখন উন্নত দেশগুলো সাগরের ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরেও বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এসব কেন্দ্র থেকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত নিয়েও আসা হচ্ছে। সাবমেরিন ক্যাবল দিয়ে দেশেও বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে।
পিডিবি সূত্র জানায়, আমেরিকার ন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) গত বছর বায়ুপ্রবাহের রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে দেশের কিছু এলাকাকে বিদ্যুত উৎপাদনের উপযুক্ত বলে জানিয়েছে। এর পরই সরকার বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।
পিডিবি সূত্র বলছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে মংলার বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্রটির সঙ্গে চুক্তি সই করতে দেরি হয়েছে। তবে এখন পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়াতে শীঘ্রই কেন্দ্রটি নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। কেন্দ্রটি থেকে ডিজেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে কম মূল্যে বিদ্যুত পাওয়া সম্ভব। তবে অন্য জ¦ালানির বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বায়ুবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি।
এখন দেশে বড় সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ১০ থেকে ১১ সেন্টের ভেতরে রয়েছে। তবে বায়ুবিদ্যুতের প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় কিছুটা বেশি হওয়াতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। তবে বায়ুবিদ্যুতের সুবিধা হচ্ছে, বাতাস থাকলে এটি থেকে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুত পাওয়া যায়। কিন্তু সৌরবিদ্যুত সূর্যের আলো না থাকলে পাওয়া যায় না।
দেশের যেসব জায়গাতে বায়ুবিদ্যুত নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে সেগুলোতে বাতাসের গতিবেগ পাঁচ মিটার/সেকেন্ড। বছরের সব সময় আবার এই মাত্রার বাতাস পাওয়া যায় না। মোটামুটি বছরের ৭৫ ভাগ সময়ে এই বাতাস পাওয়া যায়। এখন প্রযুক্তির সম্প্রসারণের ফলে বাতাসের গতিবেগ এর অর্ধেক হলেও বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা সম্ভব বলে মনে করা হয়।
আগে একটি টারবাইন থেকে কয়েক কিলোওয়াট বিদ্যুত পাওয়া গেলেও এখন এক মেগাওয়াট থেকে ছয় মেগাওয়াটের উইন্ড মিল রয়েছে। ফলে ১০ টি উইন্ডমিল বসিয়েও ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন সম্ভব। এর সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানে সৌরবিদ্যুতের মতো বড় জমি প্রয়োজন হয় না। আবার যেখানে উইন্ড মিল বসানো হয় তার নিচের জমি ব্যবহার করা যায়।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এখন শতভাগ নবায়নযোগ্য উৎসের জ¦ালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। জীবাশ্ম জ্বালানি সঙ্কটের পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণতা প্রতিরোধে এই উদ্যোগ নিচ্ছে। এজন্য দেশগুলো সৌরবিদ্যুতের সমান হারে বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। যখন আকাশে সূর্য থাকে না বাতাসের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। সৌরবিদ্যুতের উৎপাদন বন্ধ হলে গ্রিড যাতে ঝুঁকিতে না পড়ে সেজন্য বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও এই প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। ফলে এককভাবে সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র উৎপাদন করলে ভবিষ্যতে গ্রিড ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তবে উন্নত দেশগুলো কোন্ প্রক্রিয়াতে এটি করছে তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতও তাদের দেশে ৩২ হাজার মেগাওয়াট বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এক হাজার ২০০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকা রয়েছে সেখানে বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তবে মংলার এই প্রকল্প সফল হলে বায়ুবিদ্যুত উৎপাদনে দেশে গতি আসবে।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়