শেখ হাসিনা: বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরম্পরা
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
‘মাদার অব হিউম্যানিটি’সহ বহু অভিধায় অভিধাপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ৫ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ শেখ হাসিনা। পিতার জীবন দর্শনে উজ্জীবিত শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতিতে বিশ্বাসী এবং দরিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়কে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
প্রযুক্তি, রান্না, সঙ্গীত এবং বই পড়ার প্রতি বিশেষ আগ্রহ রয়েছে শেখ হাসিনার। তিনি শৈশব থেকেই ছিলেন পিতার মতই স্পষ্টভাষী, স্কুল জীবন থেকেই ক্রীড়া-সংস্কৃতি ও বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতেন। ১৯৬২ সালের হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন করেছিলেন তখন তিনি আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কলেজের ছাত্রী থাকা অবস্থায় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। তিনি ওই কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছর সভাপতি ছিলেন।
১৯৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। তিনি ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একজন সদস্য এবং ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি সবগুলো গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন।
জীবনে অনেক সংকট, চড়াই-উতরাই পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিক্রম করলেন ৭৫ বছর। তিনি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবার, ২০০৯-২০১৩ মেয়াদে দ্বিতীয়বার এবং ২০১৪-২০১৮ মেয়াদে তৃতীয়বারের মত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তার দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
অদ্যাবধি তার পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে অনেকটাই অগ্রগতি অর্জন করেছেন তিনি। তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, খাদ্যে স্বনির্ভরতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো, যোগাযোগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি এবং ভূমিহীন, দুস্থ মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি যেমন, দুস্থ মহিলা ও বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু করেন। এ ছাড়াও, কৃষকদের জন্য কৃষিকার্ড এবং ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে বর্গাচাষীদের ঋণ প্রদান ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এসডিজি’র লক্ষ্যসমূহ অর্জনের নিমিত্তে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যুর হার কমানো, বিভিন্ন ভাতা ও বৃত্তি প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রান্তিক জনগণের আর্থিক সুরক্ষা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, উড়ালসড়ক, মেট্রোরেল, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড, জিডিপির ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিসহ জাতীয় জীবনের নানা ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাফল্য অসামান্য।
কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত দাম্ভিক খুনিদের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বহুল আকাঙ্খিত বিচার কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, ছিটমহল সমস্যার সমাধান, ভারতের সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি গঙ্গার পানি চুক্তি, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ, একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়সহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে তার হাত ধরেই।
মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় শেখ হাসিনা বরাবরই আপোষহীন। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূল এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে। মিয়ানমারে নৃশংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে যে মানবিকতার পরিচয় তিনি দিয়েছেন, তা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়া দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিতে তিনি রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণা করেন। নদীমাতৃক বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ ও ভৌত উন্নয়নের জন্য তিনি ১০০ বছরের ‘ডেলটা প্ল্যান বা বদ্বীপ পরিকল্পনা’ ঘোষণা করেছেন। পরশ-পাথর ধারিণী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পর্শে দেশের সকল স্তরে যেন লেগেছে উন্নয়নের সোনালী ছোঁয়া।
দেশের এই সার্বিক উন্নয়নের ধারায় শেখ হাসিনা তার পরশ-পাথরের ছোঁয়া দেওয়ার সুযোগ রাতারাতিই পেয়ে যাননি। হাঁটতে হয়েছে পিতার মতই বহু সমস্যা, কন্টকাকীর্ণ পথ। বঙ্গবন্ধুর ন্যায় শত বাধা-বিপত্তি, হুমকি এবং জেল-জরিমানাসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করতে হয়েছে দিনের পর দিন। এমনকি হত্যার উদ্দেশ্যে কমপক্ষে ১৯ বার মতান্তরে ২২ বার সশস্ত্র হামলার শিকার হতে হয়েছে তাকে। হাল ছাড়েননি তিনি। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা। শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে চালিয়ে গেছেন নিরন্তর সংগ্রাম। যেই সংগ্রাম তীব্রতর হয়েছিল শোকাবহ ’৭৫ এর পর।
১৫ আগস্ট, ১৯৭৫! সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী কর্মকর্তা ও সদস্য সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাংলার ইতিহাসে সংঘঠিত হয় এক নির্মম ও জঘন্য হত্যাকাণ্ড। শেখ হাসিনা তখন স্বামী-সন্তান, ছোট বোন শেখ রেহানাসহ অবস্থান করছিলেন বেলজিয়ামে। দেশে না থাকায় সেদিন তারা প্রাণে বেঁচে গেলেও জীবনে গভীরতম সংকট নেমে আসে; শুরু হয় দুঃসহ এক জীবনের পথ চলা। প্রথমে জার্মানি এবং পরে ভারতে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে বাধ্য হন তিনি।
এদিকে, দেশে শুরু হয় এক মহা ক্রান্তিকাল। জাতীয় চার নেতাকে কারাগারে হত্যা করায় গভীর সংকট দেখা দেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। বাংলাদেশের রাজনীতি চলে যায় স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে। এক সময়ের প্রগতিশীলদের বড় অংশই ক্ষমতার লোভে সামরিক শাসকের সহযোগী হয়ে দেশের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে থাকে। পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে দেখা দেয় বিশ্বাসের চরম ঘাটতি। এ সময় দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে শতভাগ আস্থাশীল নেতৃত্বের দাবি ওঠে দল ও দলের বাইরে সর্বস্তরে। উদ্ভূত পরিস্থিতি ও বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় অনিবার্য হয়ে ওঠে দিল্লিতে নির্বাসিত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দলের দায়িত্ব প্রদানের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ইডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। এ সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি করে নেওয়া হয়।
শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচনের মাধ্যমে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়। শুরু হল দলের নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ। দলীয় নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর পরিবার এবং বিশ্বস্ত নেতৃবৃন্দ (শেখ সেলিম, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, ডা. এস এ মালেক, জিল্লুর রহমান, আবদুস সামাদ আজাদ, আবদুর রাজ্জাকসহ অনেকে) দিল্লি গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাকে দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে রাজি করাতে সমর্থ হন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ তারিখে শেখ হাসিনার সঙ্গে সেই সাক্ষাতে পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে প্রত্যাবর্তনসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ সভায় আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয় যে, ১৭ মে ১৯৮১ শেখ হাসিনা ঢাকায় ফিরবেন। সেই অনুযায়ী ১৬ মে ১৯৮১ দিল্লি থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে কলকাতা আসেন এবং ১৭ মে বিকেলে কলকাতা থেকে বিমানযোগে জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে ঢাকায় আসেন দেশের মানুষকে ভালোবেসে, পরিবার ও বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশে। এতে করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসীরা যেন আবার দেখতে পেল নতুন এক অত্যুজ্জ্বল আশার আলো। শুরু হলো দারুণ এক অনুভূতি নিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মুক্তিকামী মানুষের অপেক্ষার পালা।
অন্যদিকে, ১৯৬১ থেকে পরিচিত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সেই বাড়িটিতে যখন তিনি প্রবেশ করলেন তার কাছে সেটিকে মনে হল বিরান, অচেনা ও অজানা এক মৃত্যুপুরী। জীবিত নেই বাবা শেখ মুজিব, মা বেগম ফজিলাতুন্নেচ্ছা, তিন ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেলসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যই। তদুপরি, মৃত্যুপুরী বিরান বাড়িটি জেনারেল জিয়ার সরকার তালাবদ্ধ করে রেখেছে। যেন এর অভ্যন্তরে শৃঙ্খলিত হয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের প্রগাঢ় বিশ্বাস আর আদর্শ। তার স্মৃতিকাতর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের সঙ্গে প্রকৃতিও যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। শুরু হল অঝোর ধারায় বৃষ্টি, চোখের জলের সঙ্গে এক হয়ে ভিজিয়ে দিয়ে গেল অপেক্ষারত স্বজন, নেতা, কর্মীসহ কয়েক লক্ষ শুভানুধ্যায়ীকে। তিনি খুঁজতে থাকেন তার প্রিয় মানুষেদের মুখগুলো। খুঁজে না পেয়ে আবেগ জড়িত কন্ঠে চিৎকার করে বলেন ‘আমি আমার বাবার খুনিদের বিচার চাই; আমি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই’।
মুহূর্তের মধ্যে তার সে আর্ত-চিৎকারের ধ্বনি ছড়িয়ে পড়ে বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে, কোটি মানুষের হৃদয়ের গহীনে। দেশে ফেরার প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমনি আবেগসিক্ত অনেক বর্ণনা করেছেন তার নিজের লেখা গ্রন্থগুলোর পরতে পরতে। এমনি একটি আবেগঘন বর্ণনায় তিনি বলেন, ‘আমার দুর্ভাগ্য, সব হারিয়ে আমি বাংলাদেশে ফিরেছিলাম। লক্ষ মানুষের স্নেহ-আশীর্বাদে আমি সিক্ত হই প্রতিনিয়ত। যাদের রেখে গিয়েছিলাম দেশ ছাড়ার সময়, আমার সেই অতি পরিচিত মুখগুলি আর দেখতে পাই না। হারানোর এক অসহ্য বেদনার ভার নিয়ে আমাকে দেশে ফিরতে হয়েছিল।’
১৭ মে তার স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই শুরু হয় বাংলাদেশের পুণর্জন্ম। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনা দেশে এসে নতুন আরেক জীবন শুরু করলেন বঙ্গবন্ধুর পূর্ণ স্বপ্নগুলোকে বাস্তব রূপে রূপায়িত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। তিনি এসে দাঁড়ালেন এক বৃহৎ শূন্যতার মাঝে। এখানে তার ঘর নেই, ঘরের আপনজন কেউ নেই। তাই সারাদেশের মানুষই তার আপনজন হয়ে উঠল। তিনি নেতা, কিন্তু তারও বেশি তিনি কর্মী। তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন দল পুণর্গঠন, দলীয় শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার, দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, বঙ্গবন্ধু ও তার শাসনকাল সম্পর্কে অপপ্রচারের সমুচিত জবাব দেওয়া এবং দল ও দেশের মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে। তিনি তৎপর হয়ে পড়েন কারাবন্দি ও মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো হাজার হাজার দলীয় নেতাকর্মীর মুক্তির কাজে। তৎকালীন সরকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ধ্বংস করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তা রুখে দিতে তিনি বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠেন। ভয়ভীতি প্রদর্শন, অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে নেতাকর্মীদের ক্ষমতাসীন দলে ভেড়ানোর চেষ্টা, দলের ভেতর-বাইরের ষড়যন্ত্র, দলীয় কার্যক্রমে নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত করার প্রক্রিয়াগুলো কিভাবে দূরীভূত করা যায় তার উপায় অনুসন্ধানে শেখ হাসিনা খুবই জোরালো ভূমিকা পালন করেন যা সারাদেশে আওয়ামী লীগকে অতিদ্রুত পুনর্জীবিত করার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখে।
নানা হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার হওয়ার মধ্য দিয়েও দলের ভিতর-বাহিরের যড়যন্ত্র মোকাবেলার পাশাপাশি তিনি দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করার সংগ্রাম চালিয়ে যান। সামরিক ও স্বৈরশাসনকালীন যে সমস্ত কালাকানুন ও অবৈধ নির্দেশ জারি করে সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছিল সেগুলি বাতিল এবং পরিবর্তনের জন্য জোরদাবী জানান শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধের আলোকে সংবিধানের চার মূলনীতি পূণ:স্থাপনের দাবিও তিনি উত্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে জাতীয় সংসদে পাশকৃত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে আত্মস্বীকৃত খুনি এবং জেলের মধ্যে জাতীয় চারনেতা হত্যাকারীদের বিচার করার প্রত্যয় ঘোষণা করেন। দালাল আইন বাতিল করে যুদ্ধাপরাধীদের কারাগার ও অভিযোগ থেকে মুক্তি, চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তকরণ এবং স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রাজনীতি করার সুযোগদানের বিরুদ্ধে তিনি সংগ্রাম শুরু করেন। এছাড়াও তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট, ঘুষ-দুর্নীতি এবং অবৈধ ক্ষমতা দখল করে রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেও দেশবাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
তার কর্মজীবনের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহে বঙ্গবন্ধুর মত বলিষ্ঠ সাহসিকতার নমুনা দেখা যায়। দেশে ফেরার আগে ৫ মে বিশ্ববিখ্যাত নিউজউইক পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি বলেছিলেন যে, জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও তিনি দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারির দুদিন পর স্বাধীনতা দিবসে একমাত্র শেখ হাসিনাই সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সামরিক সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সামরিক শাসন মানি না, মানব না। বাংলাদেশে সংসদীয় ধারার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করবই করব।’ নানাবিধ ছুঁতায় সামরিক সরকার তাকে বারবার আটক করত। ১৯৮৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সামরিক সরকার তাকে আটক করে ১৫ দিন অন্তরীণ রাখে। ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারি এবং নভেম্বর মাসে তাকে দুইবার গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৮৫ সালের ২ মার্চ তাকে আটক করে প্রায় তিন মাস গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর থেকে তিনি ১৫ দিন গৃহবন্দি ছিলেন। ১৯৮৭ সালে ১১ নভেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে এক মাস অন্তরীণ রাখা হয়। ১৯৮৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হয়ে গৃহবন্দি হন। ১৯৯০ সালে ২৭ নভেম্বর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু ভবনে অন্তরীণ করা হয়। এরপরও একাধিকবার বন্দি অবস্থায় নিঃসঙ্গ সময় কাটাতে হয়েছে তাকে। অন্তরীণ অবস্থায় থেকেও তিনি লিখেছেন, ‘দেশ ও জনগণের জন্য কিছু মানুষকে আত্মত্যাগ করতেই হয়, এ শিক্ষা-দীক্ষা তো আমার রক্তে প্রবাহিত। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর পর প্রবাসে থাকা অবস্থায় আমার জীবনের অনিশ্চয়তা ভরা সময়গুলোয় আমি তো দেশের কথা ভুলে থাকতে পারিনি? ঘাতকদের ভাষণ, সহযোগীদের কুকীর্তি সবই তো জানা যেত।’
সামরিক সরকারের পরিসমাপ্তি ঘটলেও তা আবার আবির্ভূত নতুন রূপে; আবার ত্বরান্বিত হয় সংগ্রাম। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা নেয় খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণআন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়ার সেই সরকার ১৫ দিনের মাথায় ৩০ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগে বাধ্য হয়। এরপর ২০০৬ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে বিচারপতি কে এম হাসানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের উদ্যোগ নিলে আন্দোলন শুরু করে আওয়ামী লীগ। নানা সংকটময় পরিস্থিতির পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয় এবং ২০০৮ সালের ১১ জুন তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।
২০০৬-২০০৭ সালে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু তিনি নানা ধরনের হুমকি মোকাবিলা করে শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের দলগুলো নিয়ে গঠিত হয় ১৪ দলীয় মহাজোট। উক্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবারও দেশ শাসনের দায়িত্বভার মাথা পেতে নেন। দেশ আবারও স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত হতে শুরু করে, বাংলাদেশ আবারও ফিরে পায় তার আসল রূপ। দেশের জনগণ আবারও খুঁজে পায় সুষ্ঠু ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিমূর্তি, আশা-ভরসা ও স্বপ্ন পূরণের নির্ভরযোগ্য এক আশ্রয়স্থল, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরম্পরা বঙ্গনেত্রী শেখ হাসিনাকে।
৭৬তম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য রাজনৈতিক ও আদর্শিক পরম্পরা বয়ে নেওয়া বঙ্গনেত্রী শেখ হাসিনার জন্য অফুরান শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও শুভকামনা।
লেখক: প্রফেসর, ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কোষাধ্যক্ষ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও কার্যকরী সদস্য, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি
- লামা ফাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১২ ইউপি সদস্যদের অনাস্থা
- রুমা ও বিলাইছড়ি উপজেলা সীমান্তে গোলাগুলি
- বান্দরবানে অপহৃত সেই ব্যাংক ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি
- প্রাণী ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক
- মন্ত্রী-এমপির প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ
- চালের বস্তায় জাত, দাম উৎপাদনের তারিখ লিখতেই হবে
- ৫০ বছরে দেশের সাফল্য চোখে পড়ার মতো
- সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আসছেন আরও ৪ লাখ মানুষ
- বঙ্গবন্ধু টানেলে পুলিশ-নৌবাহিনী-ফায়ার সার্ভিসের জরুরি যানবাহনের টোল মওকুফ
- বাংলাদেশে দূতাবাস খুলছে গ্রিস
- রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে ক্যাশলেস পদ্ধতিতে যাচ্ছে এনবিআর
- কাতারের আমির আসছেন সোমবার
- এবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল যাবে পাইপ লাইনে
- কেএনএফ সদস্যদের আদালতে হাজির-দুই দিন করে চার দিনের রিমান্ড
- মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
- মুজিবনগর দিবস : সব অপশক্তিকে প্রতিহত করার অঙ্গীকার
- পর্যটন শিল্পের বিকাশে কুয়াকাটায় বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ
- হাওরে কৃষকের মুখে স্বর্ণালি হাসি
- সর্বজনীন পেনশন প্রসারে ৮ বিভাগে মেলা
- জলবিদ্যুতে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আহ্বান নেপালের
- এক সফটওয়্যারের আওতায় সব সরকারি চাকরিজীবী
- দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
- ‘মাই লকারে’ স্মার্টযাত্রা
- মাঠ প্রশাসন সামলাতে হার্ডলাইনে সরকার
- থানচি সাংগ্রাইং মৈত্রী পানি বর্ষন উৎসব
- বাইশারীতে টিসিবির পণ্য পেয়ে মহা খুশি উপকারভোগীরা
- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোন সশস্ত্র সংগঠন থাকবে না - র্যাব মহাপরিচালক
- মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
- মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- কেএনএফ সদস্যদের আদালতে হাজির-দুই দিন করে চার দিনের রিমান্ড
- থানচি সাংগ্রাইং মৈত্রী পানি বর্ষন উৎসব
- লামায় ইটভাটায় অভিযান জরিমানা আদায়
- রুমায় যৌথ অভিযানে কেএনএফ এর ৯ সদস্য আটক অস্ত্র উদ্ধার
- বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে কোন সশস্ত্র সংগঠন থাকবে না - র্যাব মহাপরিচালক
- বেঁচে গেলেন শতাধিক যাত্রী
- কিস্তির সময় পার হলেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে ঋণ
- প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি জামায়াত নেতারাও
- অবৈধ অনলাইন পোর্টালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
- জলবিদ্যুতে বাংলাদেশকে বিনিয়োগের আহ্বান নেপালের
- আপাতত মার্জারে যাচ্ছে ১০ ব্যাংক, এর বাইরে নয়: বাংলাদেশ ব্যাংক
- ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১০.৪৩ শতাংশ
- এক সফটওয়্যারের আওতায় সব সরকারি চাকরিজীবী
- নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে দুই মিয়ানমার সেনা বাংলাদেশের আশ্রয়ে
- বাইশারীতে টিসিবির পণ্য পেয়ে মহা খুশি উপকারভোগীরা
- বিভেদ মেটাতে মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারা
- মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
- ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ককে লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে যেতে হবে : শ্রিংলা
- বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও সোয়া লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি
- রেমিট্যান্সে সুবাতাস, ১২ দিনে এলো ৮৭ কোটি ডলার