শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৬ ১৪৩১
|| ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০
বান্দরবানের থানচিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মিত সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প কর্মকর্তার যোগসাজসে নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাইয়ের প্রভাব কাটিয়ে নিম্নমানের ইট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ব্রিক সলিং রাস্তা। সড়কে বালির স্তর দেয়ার কথা থাকলেও মানছে না নিয়মনীতি।
পিআইও অফিস সূত্র ও স্থানীয়রা জানায়, জেলার থানচি উপজেলার বলিপাড়া ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে মেনরোয়া পাড়া থেকে নাইক্ষ্যংপাড়া পর্যন্ত এক কিলোমিটার ব্রিক সলিং (ইটের) রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থোয়াইপ্রুঅং লাইসেন্সে সড়ক নির্মাণ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন থানচি সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ঠিকাদার থোয়াই প্রু অং। তিনি থানচি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির ছোট ভাইয়ের প্রভাব কাটিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সড়কে বালি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও দায়সাড়া ভাবে মাটি ব্যবহার করেই কাজ সারছেন।
এদিকে চেয়ারম্যানের ছোট ভাইয়ের দেখাদেখি প্রকল্প কর্মকর্তার যোগসাজসে থানচিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে চলমান সড়ক এবং ব্রিজ নির্মাণ কাজের অন্যান্য ঠিকাদারও নিম্নমানের সামগ্রি ব্যবহার নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিশ্চুক কয়েকজন আওয়ামীলীগ নেতা অভিযোগ করেন, বান্দরবানের থানচিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অর্থায়নে চলমান উন্নয়ন কাজগুলো মানসম্মত হচ্ছে না। পিআইও’কে ম্যানেজ করে ক্ষমতার অব্যবহার করে ঠিকাদার নিম্নমানের ইট দিয়ে গ্রামীণ রাস্তা তৈরি করছে। অপরদিকে পিআইও ব্রিজে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় ঝিরি ঝর্ণা থেকে অবৈধ পন্থায় উত্তোলন করা অপরিপক্ষ মাটি মিশ্রিত পাথর। যে কারণে উন্নয়ন কাজগুলো ঠিকসই হবেনা।
স্থানীয় বাসিন্দা থোয়াইচা মং, ক্যয়ামুই মারমা অভিযোগ করে বলেন, কার্যাদেশ মোতাবেক উন্নতমানের এক নাম্বার ইট দিয়ে ১০ ফুট প্রস্থ ব্রিক সলিং ইটের রাস্তা তৈরির কথা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সড়কটির কোথাও ১০ফুট প্রস্থ নেই। খুবই নিম্নমানের ভাঙা-খোয়া ইট ব্যবহার করে সড়কের নির্মাণ কাজ করা হচ্ছে। সড়ক নির্মাণ কাজে বালির স্তরের উপরে এক নাম্বার ইট বসিয়ে এবং ইটের ফাঁকে ফাঁকে বালি দেয়ার নিয়ম থাকলেও ঠিকাদার নিয়ম মানছেন না। প্রকল্প কর্মকর্তা এবং ঠিকাদার দুজন যোগসাজসে বালি ছাড়াই দায়সাড়া ভাবে সড়ক নির্মাণ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন। স্থানীয়দের অভিযোগও তারা গায়ে মাখছেন না।
এদিকে নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ স্বীকার করে নির্মাণ কাজের ঠিকাদার থোয়াই প্রু অং দাম্ভিকতার সঙ্গে বলেন, ‘দুই নাম্বার-চার নাম্বার মানের ইট ব্যবহার করছি। আপনাদের সমস্যা কী। পিআইও আরও অনেকগুলো কাজ চলমান রয়েছে। সেগুলো কেন চোখে দেখেন না। অন্যরা যেভাবে কাজ করছে আমিও ঠিক ঐভাবে কাজ বাস্তবায়ন করছি।’
এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তরিকুল ইসলাম বলেন, থানচিতে ভালোমানের ইট না পাওয়ায় বান্দরবান থেকে নিয়ে কাজ করতে বলেছি। বালি ব্যবহার না করায় সড়ক নির্মাণ কাজও বন্ধ করে দিয়েছিলাম একবার। কোনো ধরণের দুই নাম্বার ইট ব্যবহার করা হচ্ছে না বর্তমানে। বালিও ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে (প্রেস ক্লাবের) সঙ্গে আমরা সমন্বয় করি। তারপরও কেন আপনারা ঝামেলা করেন। যথাসাধ্য চেষ্টা করি কাজেরগুনগত মান ঠিক রাখতে। কিন্তু পাহাড়ে শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন কঠিন। সেটি আপনিও ভালো বুঝেন।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়