শুভ জন্মদিন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২১
আজ ২৩শে জুলাই বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চারনেতার অন্যতম শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদের ৯৬ তম জন্মদিন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার পাশাপাশি প্রথম সরকার গঠনেও নেতৃত্ব দেন ক্ষুরধার মস্তিষ্কের এই রাজনীতিক। বিশাল হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু আর অসাধারণ রাজনৈতিক প্রজ্ঞার অধিকারী তাজউদ্দিনের সমন্বয়ে গড়ে উঠে দুর্দান্ত এক রাজনৈতিক জুটি। যার হাত ধরে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। গাজীপুরের কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে ১৯২৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন তাজউদ্দিন আহমেদ।
চার ভাই, ছয় বোনের মাঝে চতুর্থ তাজউদ্দীন আহমদের পড়াশোনা শুরু বাবার কাছে আরবি শিক্ষার মাধ্যমে, একই সময়ে ১ম শ্রেণীতে ভর্তি হন বাড়ির দুই কিলোমিটার দূরের ভূলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১ম ও ২য় শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হন বাড়ি থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরের কাপাসিয়া মাইনর ইংলিশ স্কুলে। মায়ের প্রচেষ্টা ছিলো ছেলেকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে লেখাপড়া করানোর। সফল হন তিনি। এরপর বিদ্যালয় পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পড়েছেন কালিগঞ্জ সেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশন, ঢাকার মুসলিম বয়েজ হাই স্কুল ও সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে। এ সময় একজন স্কাউট হিসেবে স্কাউট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। পরবর্তী কর্মজীবনে যা তাঁর প্রেরণা ও কাজ করার ক্ষমতা জুগিয়েছে।
এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন – ‘স্কাউট হিসেবে শিক্ষা, স্বাধীনতা সংগ্রামে আমাকে অমানুষিক পরিশ্রম করতে প্রেরণা ও ক্ষমতা জুগিয়েছে’। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সিভিল ডিফেন্স-এর ট্রেনিং নিয়েছিলেন তিনি। এম.ই স্কলারশিপ পরীক্ষায় ঢাকা জেলায় প্রথম স্থান লাভ করেন। শুধু তাই নয় প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায়। ১৯৪৪ সালে এই পরীক্ষায় অবিভক্ত বাঙলায় দ্বাদশ স্থান লাভ করেন তিনি । এ সময়ই জড়িয়ে পড়েন মুসলিম লীগের রাজনীতির সাথে, হয়ে ওঠেন পার্টির সক্রিয় সদস্য। এ বছর নির্বাচনে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। যদিও মুসলিম লীগের গণবিচ্ছিন্ন রাজনীতির প্রতিবাদে, পরবর্তীতে দলের সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেছিলেন। একই বছর কোলকাতায় শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পরিচয় হয় তাঁর। ভালো পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় ছিলো উচ্চ মাধ্যমিকেও; ঢাকা বোর্ডে অর্জন করেন চতুর্থ স্থান এবং ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উচ্চ শিক্ষায় তাঁর বিষয় ছিলো অর্থনীতি। এমনই মেধা-উজ্জ্বল শিক্ষা জীবনের ধারক ছিলেন এ অনন্য ব্যক্তিত্ব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশে ছিলো এদেশীয় রাজনীতির প্রতিফলন। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পটভূমিতেই রচিত হয়েছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের রূপরেখা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক পরিবেশ তাজউদ্দীন আহমদকে দেশ ও রাজনীতি নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। জড়িয়ে যান সক্রিয় রাজনীতিতে। যদিও চিন্তা ধারায় দেশ ও রাজনীতির বীজ রোপিত হয়েছিলো অনেক আগেই- সেই কাপাসিয়াতে। সেই সময় এই কাপাসিয়াতেই নির্বাসিত হয়েছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তিন বিপ্লবী রাজেন্দ্র নারায়ণ চক্রবর্তী, বিরেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মনীন্দ্র শ্রীমানী। তিনি তখন কাপাসিয়া মাইনর স্কুলের শিক্ষার্থী। তাজউদ্দীনের প্রখর মেধার পরিচয় পান এই বিপ্লবীরা এবং তাঁকে ভূগোল, অর্থনীতি, রাজনীতি ও মনীষীদের জীবনী সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেন তাঁরা। তাঁদের কাছ থেকে নিয়ে পড়ে ফেলেন প্রায় পঞ্চাশ ষাট খানা বই। বিপ্লবীরা তাঁর চেতনার মাঝে রোপন করে দেন শোষণ ও বঞ্চনাহীন সমাজ আর অধিকার আদায়ের রাজনীতির বীজ। এক সময় বিপ্লবীরা চলে যান। যাবার সময় দেখা হয়নি; কিন্তু তাঁর বিছানায় রেখে যাওয়া গোলাপের তোড়ায় মাখা ছিলো আগামী দিনের রাজনৈতিক শুভকামনার সুবাস। তাজউদ্দীন আহমদ সেই সুবাসকে ঠিকই ধারণ করেছিলেন নিঃশ্বাসে। আর তাই তো ১৯৪৮ এ প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাঙলা ছাত্রলীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হয়েছিলেন তিনি। তিনিই ছিলেন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনের উদ্যোক্তাদের একজন। শুধুমাত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা আর আবাস ভূমির জন্যই নয়; বাঙালিকে আন্দোলন করে রক্ত ঝরাতে হয়েছে মুখের ভাষার দাবিতেও। ভাষা আন্দোলনেও তাজউদ্দীন ছিলেন সোচ্চার কন্ঠ। ১৯৪৮-এর ১১ এবং ১৩ মার্চ সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ধর্মঘট-কর্মসূচি ও বৈঠক করেন। ২৪ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারাসহ তিনি বৈঠক করেন; যদিও জিন্নাহর অসহিষ্ণু আচরণের কারণে এ বৈঠক কোনো সুফল বয়ে আনতে পারেনি।আওয়ামী মুসলিম লীগ’ থেকে ‘আওয়ামী লীগ’১৯৫৩ সাল। ‘আওয়ামী মুসলীম লীগ’ দলের কাউন্সিলে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘মুসলিম’ শব্দটি দলের নাম থেকে বাদ দেবার সিদ্ধান্ত নেয়। শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময়ই আওয়ামী লীগে সক্রিয়ভাবে যোগ দেন তাজউদ্দীন আহমদ। এ বছরই তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর মাঝে সহজ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেশীয় রাজনীতিতে বাড়তে থাকে আওয়ামী লীগের প্রভাব। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর-পূর্ব আসনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হন তাজউদ্দীন। প্রতিপক্ষ মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ নেতা ফকির আব্দুল মান্নানকে ১৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৯ বছর।
এ নির্বাচনী প্রচারণায় হাতির পিঠে চড়ে তাঁর জন্য ভোট সংগ্রহ করেছেন জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময়ে তাঁর ভূমিকা ষাটের দশকের মধ্যবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার এক সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে সে অনুযায়ী কর্মকান্ড এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় জেনারেল আইয়ুবের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনামলে (১৯৫৮-১৯৬৯) আওয়ামী লীগ স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনে অগ্রপথিক হিসেবে ভূমিকা পালন করে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দলের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন। এ রাজনৈতিক পুনরুজ্জীবন ও অগ্রগামিতার আন্দোলনে, রাজনৈতিক বলিষ্ঠ পদক্ষেপের জন্য তাজউদ্দীন আহমদ ক্রমে হয়ে উঠতে থাকেন ভবিষ্যতের দৃপ্ত সারথি। চলতে থাকে রাজনীতি, গ্রেফতার হন ১৯৬২ সালে। ১৯৬৪ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক হন আওয়ামী লীগের। ছয় দফার ঐতিহাসিক ১৯৬৬ সালে হন সাধারণ সম্পাদক। ছয় দফা আন্দোলনের কারণে দেশরক্ষা আইনে ১৯৬৬ সালের ৮ মে পুনরায় গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন তাজউদ্দীন। মুক্ত হন ১৯৬৯-এর ১২ ফেব্রুয়ারি। ইয়াহিয়া-ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবের আলোচনায় তিনি ছিলেন ফাইলপত্র নিয়ে নিয়মিত হাজির হওয়া গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী, যিনি তাঁর দাবির ব্যাপারে ছিলেন অনড়। ইয়াহিয়া তাজউদ্দীনকে ভয় করতো, কারণ আলোচনার টেবিলে তিনি ছিলেন খুবই কঠোর, কোনো ছিটেফোঁটা আবেগও তাঁর মাঝে কাজ করত না। সব আলোচনা-আন্দোলন যখন অনিবার্যভাবে একটি সংঘাতময় যুদ্ধ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, তার আগেই শেখ মুজিব দলীয় হাই কমান্ড গঠন করেন। পাঁচ জনের হাই কমান্ডের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন তিনি। ১৯৫৯ সালের ২৬ এপ্রিল সৈয়দা জোহরা খাতুন লিলির সাথে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি। বিয়ের অলংকার ছিল বেলী ফুলের মালা। তাঁর স্নিগ্ধ চেতনা আর মানসিকতার সুগন্ধ বহন করছিলো মালার শুভ্র বেলী ফুলগুলো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত। বাঙালি জাতির উপর নেমে আসে পাকিস্তানি বাহিনীর নারকীয়, বীভৎস, খড়গ হস্ত। এ বাহিনী নিরীহ বাঙালিদের নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে। গ্রেফতার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাজউদ্দীন তাঁর সহযাত্রী ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলামকে নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হন। মহম্মদ আলী ছদ্মনাম নিয়ে, গ্রেফতার এড়িয়ে, শত্রু সেনার চোখ এড়িয়ে তিনি অবশেষে হাজির হন ভারতীয় সীমান্তে। দীর্ঘ পথ শ্রমে ক্লান্ত। সীমান্ত থেকে সামান্য দূরে বৃটিশ আমলে তৈরি কালভার্টের উপর শরীর এলিয়ে দেন। তাঁর অবসন্ন চোখের পাতায় নেমে আসতে চায় রাজ্যের ঘুম। না, তিনি ঘুমিয়ে পড়েননি, তিনি ঘুমিয়ে গেলে তো চলবে না। দেশ স্বাধীন করতে, স্বাধীন দেশকে ভূমিষ্ঠ করাতে তিনি তো নিজে ধাত্রী। তাঁর চোখে তো ঘুম শোভা পায় না। তাঁর ভাষায়, ‘আমি সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য কাজ শুরু করা’ (তাজউদ্দীন আহমদ-ইতিহাসের পাতা থেকে। পৃষ্ঠা-২৯১)। যথাযোগ্য মর্যাদায়, স্বাধীন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে ভারতে প্রবেশ করে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করেন। ভারত সহযোগিতার আশ্বাস দেয়। জরুরি হয়ে পড়ে একটি সরকার গঠন।
শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আর নিজে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ এপ্রিল সরকার গঠন করেন ও ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বদ্যিনাথ তলার আম্রকাননে শপথ গ্রহণ করেন। শত বাধা বিপত্তির মাঝে তিনি প্রবাসী সরকার চালিয়ে যেতে থাকেন। গঠন করেন প্রশাসনিক কাঠামো, এমনকি আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, একই সাথে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তাই যুদ্ধের সাংগঠনিক পরিকল্পনাও করতে হচ্ছিল তাঁকে।
দেশ থেকে চলে আসার সময় পরিবার পরিজনের সাথে সাক্ষাৎ করতে না পেরে শুধু একটি চিরকুট পাঠিয়েছিলেন স্ত্রীকে-
‘'সাড়ে সাত কোটি মানুষের সাথে মিশে যেও"
প্রবাসে ও যতদিন দেশ স্বাধীন না হবে ততদিন পারিবারিক জীবন-যাপন না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে আট নম্বর থিয়েটার রোডের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর অফিস কক্ষের পেছনে লাগোয়া একটি কক্ষে রাতে থাকতেন৷ যুদ্ধকালীন ঘুরে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা। মুক্তি বাহিনীকে, সাধারণ মানুষকে সাহস জুগিয়েছেন তিনি। শেখ মুজিবের ছিল নেতৃত্বের ক্যারিশমা আর তাজউদ্দীন আহমদের ছিলো সাংগঠনিক দক্ষতা। মূলত তাঁর সুনিপুণ দক্ষতার গুণেই যুদ্ধ সঠিক পথে এগোতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের পশ্চাতে তাঁর কৌশলগত চিন্তা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও দূরদর্শিতার ভূমিকা খুব বড় ছিলো। যুদ্ধের সময় দলের অভ্যন্তর থেকে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু তিনি দক্ষতার সাথে সেসব মোকাবেলাও করেছেন। এ সময় উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির বৈঠকে, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বিরুদ্ধে একটি অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। যুদ্ধকালীন গঠিত সরকারের মাঝেই ছিলো বিভিন্ন বিরোধের ভূত। তিনি সবকিছুকে বিবেচনা করতেন তাঁর নিরীক্ষার দক্ষতা দিয়ে। বুকে ছিলো তাঁর সত্যের সাহস আর মনে ছিলো নেতার প্রতি অবিচল আস্থা। দূরদর্শিতা ছিলো তাঁর অসামান্য। পকিস্তানিরা একটি সুশিক্ষিত সৈন্যবাহিনী। তাদের সাথে লড়াই করার জন্য দরকার মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, গোলা-বারুদ। এসব কিছুর ব্যবস্থা করাও সহজ ছিলো না। কিন্তু তিনি সবকিছু মোকাবিলা করেছেন দক্ষতার সাথে। বিশ্ব রাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সমন্বয় সাধন এবং নতুন জন্ম নেয়া বাঙলাদেশের প্রতি সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে কূটনৈতিক তৎপরতাও চালিয়ে যান তাজউদ্দীন। এমনিভাবে যুদ্ধের সময়ে কখনও যুদ্ধক্ষেত্রে, কখনও শরণার্থী শিবিরে, কখনো ভারতীয় মন্ত্রীদের সাথে বৈঠক করে আবার কখনও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগ্রামী শিল্পীদের সাথে নিয়ে তাঁর যুদ্ধের প্রতিটি দিন কাটতে থাকে। তিনি বুঝেছিলেন এ যুদ্ধের পরিণতি আসন্ন শীতকালের ভেতরই হয়ে যাবে। তাঁর তৎপরতায় সঠিকভাবেই এগোতে থাকে সবকিছু। ভারত স্বীকৃতি দেয় বাঙলাদেশকে। দিনটি ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১। ডিসেম্বরের শুরুতে ভারতীয় মিত্র বাহিনী যৌথভাবে বাঙালি মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে অংশ নেয়। প্রচন্ড আক্রমণে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে পাক হানাদার বাহিনী। যুদ্ধ চলাকালীন মুজিব নগর সরকারের কতিপয় ষড়যন্ত্রী নেতা পাকিস্তানের সাথে সমঝোতার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা কঠোর হস্তে দমন করা হয়৷পাকিস্তানিদের রসদ সরবরাহে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মুক্তিযোদ্ধারা। তাদের পক্ষে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ প্রতিহত করা ছিলো দুস্কর। অবশেষে পাকিস্তানিরা পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়৷
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের বিজয় পাখির। ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি তাজউদ্দীন এক টিভি ভাষণে বলেন- ‘'৩০ লক্ষাধিক মানুষের আত্মাহুতির মাঝ দিয়ে আমরা হানাদার পশুশক্তির হাত থেকে পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বিধৌত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ঢাকার বুকে সোনালি রক্তিম বলয় খচিত পতাকা উত্তোলন করেছি’'। তিনি জানতেন তিনি একজন ধাত্রী। আর অভ্যুদিত বাংলাদেশের জনক রয়েছেন শত্রু শিবিরে বন্দি। তিনি কাঁদেন দুঃখে, ক্ষোভে, বেদনায়। মুক্তি দাবি করেন জাতির জনকের। দেশ স্বাধীন হবার পর সম্মিলিতভাবে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে ফিরে এলে মন্ত্রী পরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদ হন নয়া সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী। ১৯৭৩-এ ঢাকা-২২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এতোদিন যিনি সংগ্রাম করেছেন দেশ স্বাধীনের জন্য এখন তিনি সংগ্রামে নামেন দেশ গঠনের। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ব্যবস্থাকে চাঙা করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান তিনি। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে চাঙা করে তুলতে বেগ পেতে হয় তাঁকে। নতুন দেশে নেতা কর্মীদের সাথে দলের, আর জনগণের সাথে সরকারের দূরত্ব বাড়তে থাকে। ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলের সমাপনী অধিবেশনের বক্তৃতায় তিনি দল, সরকার এবং নেতা ও কর্মীদের মাঝে দূরত্ব দূর করে, সংগঠন এবং সরকারের মাঝে এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান। এদিকে সুবিধাভোগী, দুর্নীতিপরায়ণ, চাটুকার রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের নির্লজ্জ তৎপরতা বেড়েই চলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে তাজউদ্দীন আহমদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। তাঁদের মাঝে নীতিগত বিরোধ দেখা দেয়। তাঁদের সুন্দর সম্পর্কে ফাটল ধরে। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করতেন। তিনি ছিলেন মনে প্রাণে দেশ প্রেমিক। চাইতেন না কোনোদিনই তাঁকে জড়িয়ে এমন কোনো বিতর্কের সৃষ্টি হোক যা থেকে জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কোনো ক্ষতি হয়। আর তাই একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সফল নেতা মন্ত্রীসভা থেকে বিদায় নিলেন স্বাধীনতা লাভের মাত্র ২ বছর ১০ মাসের মাথায়। যে নেতা দেশের জন্য পরিবার পরিজন ভুলে গিয়েছেন, ১৯৭০-এর ঘূর্ণিঝড়ে নিজ হাতে মৃতদেহ টেনেছেন, ১৯৭১-এ মুক্তি বাহিনীকে সাংগঠনিক নেতৃত্ব দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে একাত্ম থেকেছেন, তাঁকেই শেখ মুজিবের নির্দেশে পদত্যাগ করতে হয়!!! তিনি ছিলেন একজন আদর্শবাদী নেতা। আদর্শই তাঁর কাছে ছিল বড়ো। পদত্যাগেও তাই ব্যক্তি নয়; নীতিগত বিষয়ই ছিলো প্রধান। তিনি একবারও জানতে চাইলেন না। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসের শেষে তাজউদ্দীন আহমদ জানতে পারেন যে, সেনাবাহিনীর মাঝে একটি দল রয়েছে যারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি চরম অসন্তুষ্ট। তারা তাঁকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছে। ঐ রাতেই শেখ মুজিবকে নিজে গিয়ে সচেতন করেন তাজউদ্দীন। তাঁর আশঙ্কাকে সত্য করে দিয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়৷ এ ভয়াবহ রূঢ়, নৃশংস ঘটনায় সবাই স্তম্ভিত। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্ট বঙ্গুবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর খুনিদের নিয়ন্ত্রিত মোস্তাক সরকারে যোগ দেবার প্রন্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন তাজউদ্দিন আহমেদ, তার ফলে পৃৃৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র বর্বরতম অধ্যায় রচিত হয়, জেলখানার মত সুরক্ষিত স্থানে সকল নিয়মনীতি, আইনকানুন বিধিবিধান লংঘন করে কারান্তরীণ তাজউদ্দিন আহমেদসহ জাতীয় চারনেতাকে ১৯৭৫ এর ৩রা নভেম্বর নির্মমভাবে একটি সেলে রেখে প্রথমে ব্রাশফায়ার করে পরে বেয়ন্যাট চার্জ করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
জাতীর এই অবিসংবাদিত নেতা যিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন, সেই মহান নেতার ৯৬ তম জন্মবার্ষিকীতে বাংলার উন্নয়ন পরিবার তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছে।
- বদলি হলেও চাকরিতে যোগদান করেননি নাথান বমের স্ত্রী
- থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা
- সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ
- আইনের আওতায় আসবে সব ধরনের অনলাইন সেবা
- হজযাত্রীদের সহযোগীতার আশ্বাস সৌদির
- ব্যাংক একীভূত হলেও আমানত সুরক্ষিত থাকবে: বাংলাদেশ ব্যাংক
- মডেল ঘরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ কৃষকের মধ্যে সাড়া
- আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করতে চায় ভারত
- ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মে থেকেই অভিযান
- বে-টার্মিনালে বিনিয়োগ হবে দশ বিলিয়ন ডলার
- ৩ শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমতে পারবে না
- এভিয়েশন শিল্পে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য
- আলীকদমে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়নে সমন্বয় কমিটির সভা
- বৃষ্টির জন্য বান্দরবানে নামাজ আদায়
- বৃষ্টির জন্য আগামীকাল বান্দরবানে নামাজ অনুষ্ঠিত হবে
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন চহ্লামং মারমা
- কেএনএফ সংগঠনের সাথে জড়িত সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতা সহ গ্রেপ্তার ৭
- সেনা অভিযানে কেএনএফ সদস্য নিহত
- কেএনএফ এর ৫ জনকে ২ দিনের রিমান্ড,নতুন আরো ৩ নারি সদস্য কারাগারে
- বান্দরবানে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সেবা প্রদানে হেল্প ডেক্স উদ্বোধন
- বহিষ্কার হলেন রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি
- প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন
- কাতারের সঙ্গে ১০ চুক্তি-সমঝোতা
- সম্পর্ক নতুন উচ্চতায়
- ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন
- দুই মাসের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন চান হাইকোর্ট
- চলছে কয়লা খালাস, জাহাজেই ফিরবেন সব নাবিক
- আমানতের মুনাফার ওপর কর দিতে হবে না
- ঢাকার পয়ঃবর্জ্য ও গ্যাস লাইন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কমিটি গঠনের নির্দেশ
- বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি করিডোরের জন্য কেনা হচ্ছে ১৩৭টি এসি বাস
- বৃষ্টির জন্য আগামীকাল বান্দরবানে নামাজ অনুষ্ঠিত হবে
- বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএর সন্ত্রাসী নিহত
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন চহ্লামং মারমা
- কেএনএফ সংগঠনের সাথে জড়িত সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতা সহ গ্রেপ্তার ৭
- বহিষ্কার হলেন রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি
- বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি করিডোরের জন্য কেনা হচ্ছে ১৩৭টি এসি বাস
- সেনা অভিযানে কেএনএফ সদস্য নিহত
- বান্দরবানে সর্বজনীন পেনশন স্কিম সেবা প্রদানে হেল্প ডেক্স উদ্বোধন
- ডিজিটাল জরিপকালে জমির মালিকদের জানাতে হবে
- গ্যাস খাতে বড় সংস্কার করবে পেট্রোবাংলা
- বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিতে চায় কিরগিজস্তান
- বেনজীরের সম্পদ অনুসন্ধানে দুদক
- দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন
- ৯ মাসে রাজস্ব আয়ে ১৫.২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন
- আমানতের মুনাফার ওপর কর দিতে হবে না
- মুক্তিযুদ্ধ ও মুজিবনগর সরকার নিয়ে গবেষণার আহ্বান
- নোয়াখালীর নতুন গ্যাস কূপে খনন কাজ শুরু
- কেএনএফ এর ৫ জনকে ২ দিনের রিমান্ড,নতুন আরো ৩ নারি সদস্য কারাগারে
- যমুনায় বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর ৪.৮ কিমি এখন দৃশ্যমান
- চলছে কয়লা খালাস, জাহাজেই ফিরবেন সব নাবিক