বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৭ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২০
উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলে হবে দুটি টিউব। এর মধ্যে একটি টিউবের কাজ শেষ। দ্বিতীয় ও শেষ টিউবের কাজ শুরু হবে আসছে ডিসেম্বরে। এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে দেশের প্রথম ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ নির্মাণের কাজ। বঙ্গবন্ধু টানেলের দুটি টিউব নির্মাণের মাধ্যমে স্বপ্নের দুয়ার খুলতে শুরু করেছে। বাস্তবে রূপ নিচ্ছে এই স্বপ্নের প্রকল্পের। ইতিমধ্যে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সামগ্রিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৬০ শতাংশ। এর আগে প্রথম টিউব নির্মাণ (বোরিং) কাজ হয়েছিল প্রায় ৪ মাস আগে। প্রথম টিউব নির্মাণ শেষ করে এখন সংযোগ সড়ক তৈরির কাজ চলছে। টানেল নির্মাণ ঘিরে কর্ণফুলীর দুই তীরে উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালিত হচ্ছে।
জানা গেছে, চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগর চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে নগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে মূল টানেল ছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার একটি ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে এ প্রকল্প। প্রকল্পের ৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় টিউব নির্মাণের কাজ শুরু হবে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। আনোয়ারা প্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম প্রান্তে এই নির্মাণকাজ শুরু হবে। চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে নির্মিত প্রথম টিউব থেকে ১২ মিটার দূরে নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় টিউব। প্রথম টিউবের মতো দ্বিতীয় টিউবও স্থলভাগ থেকে নদীর দিকে যাওয়ার সময় ধীরে ধীরে মাটির গভীরে যাবে। নদী থেকে উপকূলে ওঠার সময় ধীরে ধীরে উঠে আসবে। মাটির ১৮ মিটার থেকে ৪৩ মিটার নিচ দিয়ে যাবে টিউব। ফলে নদীর প্রবাহে কোনো সমস্যা হবে না। তবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজ শেষ করতে চান বলে জানান তিনি। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, বঙ্গবন্ধু টানেলের চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে আনোয়ারা প্রান্তে ১২ মিটার ব্যাসের একটি টিউব স্থাপনের কাজ শেষ করার পাশাপাশি টানেলের দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ডিসেম্বরে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টিউবের কাজ শেষ হলে এই টানেলের চার লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে সিটি আউটার রিং রোড দিয়ে পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলে প্রবেশ করে আনোয়ারা প্রান্তে পটিয়া-আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের চাতরী চৌমুহনী পয়েন্টে ওঠা যাবে। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে উঠবে এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপিত হবে। এতে সাধিত হবে যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন। এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপিত হবে। এতে ভ্রমণ সময় ও খরচ হ্রাস পাবে এবং পূর্ব প্রান্তের শিল্প-কারখানার কাঁচামাল, প্রস্তুতকৃত মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর ও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন প্রক্রিয়া সহজ হবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের সঙ্গে সহজ যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনের ফলে পর্যটনশিল্প বিকশিত হবে। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর এই টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানেলের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪.৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে এই প্রকল্পে পাঁচ হাজার ৯১৩.১৯ কোটি টাকা দেবে চায়নিজ এক্সিম ব্যাংক।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়