হেঁয়ালে-খেয়ালে রাষ্ট্রভাষা
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
একটি গোষ্ঠী, যেটি শিক্ষিত শ্রেণির অংশ; প্রতিনিয়ত সঠিক বাংলা শব্দ-বাক্যকে বাদ দিয়ে বাংলা ভাষার মধ্যে ইংরেজি ব্যবহার করছে।
শুধু মৌখিক নয়, লিখিতভাবেও ইংরেজি শব্দ-বাক্য বাংলা বর্ণমালায় লিখছে বা প্রতিবর্ণীকরণ রূপ দিচ্ছে। পরিকল্পনা, রাজনীতি, প্রশাসন, বাণিজ্য, শিক্ষা, শিক্ষাক্রম, পাঠদান, কর্মশালা, বিভাগ-অনুষদ, গবেষণা, বিজ্ঞাপন, গল্প-উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ সর্বত্র আজ এ প্রক্রিয়া চলমান। ফলে বাংলা ভাষা দিন দিন গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছে।
অতীতেও বাংলা ভাষার সঙ্গে শত্রুতা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানের মাত্রা ভিন্ন। বর্তমান ধারায় মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিসংগ্রাম, পতাকা, চেতনা, বিপ্লব, স্বাধীনতা ইত্যাদি ঐতিহাসিক ও চেতনাদীপ্ত শব্দ বাদ দিয়ে বিদেশি, বিশেষ করে ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের স্বীকৃত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম সংক্ষিপ্তকরণে বাংলার কোনো প্রচলন নেই। বাংলা ভাষা বিদ্রুপে পড়ছে দৈনন্দিন ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, প্রচারমাধ্যম, যোগাযোগমাধ্যম ইত্যাদির নামের ক্ষেত্রে।
প্রহসনের শিকার হচ্ছে বেতার, টেলিভিশন, প্রযুক্তিগত মাধ্যমে। সাম্প্রতিক করোনাসংক্রান্ত বিজ্ঞাপন, টিকাসংক্রান্ত বার্তা, মুঠোফোন বা ‘অনলাইন’ নিবন্ধন-সব ক্ষেত্রেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইংরেজির প্রভাব লক্ষণীয়।
স্বীকার্য যে, প্রযুক্তির ভাষা বাংলা না হওয়ায় এবং প্রযুক্তিগত শব্দের যথাযথ বাংলা পরিভাষা না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বঙ্গ ভাষাপ্রেমীদের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষায় অনেক নতুন শব্দ প্রয়োগ করেছিলেন।
কিছু ইংরেজির অনুবাদ করে, কিছু পুরোনো শব্দ বা ধাতুর ওপর কাজ করে। ১৭৭৭ সালে কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট স্থাপনের মাধ্যমে বাংলা পরিভাষা প্রণয়নের যে সূত্রপাত হয়েছিল, রবীন্দ্র-পরবর্তীকালে সে ধারা চলমান থাকেনি।
বর্তমানে প্রযুক্তি, শিক্ষা, অর্থনীতি ও অন্যান্য কারণে বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে আসা নতুন শব্দগুলোর পরিভাষা প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ নেই; নেই যথাযোগ্য বাংলা শব্দের ব্যবহার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা। বিদেশি শব্দ বাংলায় আত্তীকরণের সার্বজনীন বিধানও নেই। বাধা-বিপত্তি না থাকার ফলে সর্বস্তরে বাংলার সঙ্গে ইংরেজির মিশ্রণ, যথোপযুক্ত বাংলা শব্দ বাদ দিয়ে ইংরেজির প্রতিবর্ণীকৃত রূপের ব্যবহার এক ধরনের নিয়মে পরিণত হয়েছে।
উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলা ভাষা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে-এ কথা আজ অসার, অচল। উপরন্তু উন্নয়নের কাজে একাধিক ভাষার ব্যবহার নানারকম বিঘ্ন ঘটায়। উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় একটি ভাষার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে তা যথোচিত লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়। বাংলাই বাঙালির টেকসই উন্নয়নের মাধ্যম।
ইংরেজিই যদি উন্নয়নের প্রধান ভাষা হতো তাহলে কোরিয়া, জাপান, মালয়েশিয়ার এত উন্নয়ন সম্ভব হতো না, উন্নতির প্রসারও হতো না। যদি শুধু বাংলাকে উন্নয়নের ভাষারূপে ব্যবহার করা হয়, তাহলে বাংলা ভাষা দ্রুত মানরূপ পাবে। নতুন শব্দ, পরিভাষা গঠিত হবে। বাক্যসংগঠন ও ভাষার শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
শুদ্ধ-নির্ভুল বাংলার ব্যবহারই যথাযথ পাণ্ডিত্য। অকারণে বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশ্রণের পণ্ডিতমানী জ্ঞানের গভীরতা প্রকাশ করে না। যোগ্যতা, মর্যাদা ও স্বীকৃতির মানদণ্ডে বাংলা বর্তমানে বিশ্বমানের ভাষা। বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটি মানুষের এ ভাষা পৃথিবীর দ্রুত বিকাশমান ভাষাগুলোরও অন্যতম।
বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারও সমৃদ্ধ। বিশ্বের বহু দেশে এ ভাষার সুদীপ্ত অনুশীলন হচ্ছে। অনেক বিদেশি বাংলা শিখছেন, বাংলায় লেখালেখি ও গবেষণা করছেন। সিয়েরা লিওন বাংলাকে তাদের দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। বাংলা ভাষায় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর ঐতিহাসিক দলিলের স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ভাষায় রচিত আমাদের জাতীয় সংগীত পৃথিবীর মধুরতম সংগীতের একটি।
২০১৮ সালে টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে আরবির সঙ্গে বাংলায় বয়ানও রাষ্ট্রভাষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ রাষ্ট্রপতি হিসাবে এক আদেশে বলেছেন, ‘...মাতৃভাষার প্রতি যার ভালোবাসা নেই, দেশের প্রতি যে তার ভালোবাসা আছে এ কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।’ বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের যে উদ্দীপনা দেখা দিয়েছিল; শিক্ষা, চাকরি, অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রে যে গুরুত্ব পেয়েছিল; পঁচাত্তরের পর সেই ধারা বিপরীতমুখী হয়ে ওঠে।
প্রতিক্রিয়াশীলতা তীব্র হয়ে ওঠে। ‘বেতার’, ‘চালনা বন্দর’, ‘পৌরসভা’, ‘রাষ্ট্রপতি’ ইত্যাদি বাংলা শব্দ বাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ইংরেজির ব্যবহার হতে থাকে। অথচ সংবিধানে উল্লিখিত ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ অনুচ্ছেদ বজায় রেখে, একক-নির্দিষ্ট রাষ্ট্রভাষার বাংলাদেশে, বাংলা শব্দ-বাক্যকে বাদ দিয়ে বিদেশি ভাষার ব্যবহার শুধু বাংলার সঙ্গে প্রহসন নয়; রাষ্ট্র, সমাজ ও দেশের সঙ্গেও বিদ্রুপতা।
বাংলা ভাষা নির্বাসনের মাত্রা ও প্রকৃতি বর্তমানে এত বিশৃঙ্খল অবস্থায় পৌঁছেছে যে, শুধু দেশপ্রেম ও জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ দ্বারা তার নিরসন সম্ভব নয়। বিদেশি ভাষার আগ্রাসনও প্রতিরোধ হবে না। জাপান সরকার ভাষা প্রয়োগে জনসচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে।
চীনের সরকার আইন করেছে, সেদেশের ভাষার মধ্যে কোনো বিদেশি ভাষার শব্দ-বাক্য মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে না। বাংলাদেশেও ১৯৮৭, ২০১২ ও ২০১৪ সালে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন ও শুদ্ধ প্রয়োগের আইন বা হাইকোর্টের রুল জারি হয়েছে; কিন্তু সেগুলোর বাস্তবিক প্রভাব তেমন দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়।
বাংলা-বাঙালি-বাংলা ভাষা এবং মুক্তিসংগ্রাম-চেতনা-স্বাধীনতা একই সূত্রে গাঁথা। বর্তমান শিশুরা যে পরিবেশে, যে ভাষা ও সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠবে, সেই পরিবেশ, সেই ভাষা ও সংস্কৃতিকে সে সহজেই আত্মস্থ করবে।
বাঙালির চেতনাকে লালন করতে হলে বাংলা ভাষা বিসর্জনের এ সংস্কৃতি থেকে উত্তরণের নতুন পরিকল্পনা জরুরি। ভাষা চেতনায় আবিষ্ট থেকে, নিজেরাই হেঁয়ালি-খেয়ালে বাংলার সঙ্গে প্রহসন করছি কিনা সেই আত্মোপলব্ধিও আজ বড় প্রয়োজন।
ড. মুহম্মদ মনিরুল হক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক
- বান্দরবানে মে দিবস উদযাপন
- পথচারীদের বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন প্রদান করেছে বান্দরবান পৌরসভা
- বান্দরবানে উপজেলা নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনের অভিযোগ
- কেএনএফ সংগঠনের সাথে জড়িত সন্দেহে এক নারী সদস্য কারাগারে
- গণতন্ত্র দখলকারীদের থেকে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়
- প্রবৃদ্ধির দৌড়ে চীন মালয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
- চিকিৎসকরা অফিস টাইমে হাসপাতালের বাইরে গেলে ব্যবস্থা
- রেডিয়েশন প্রয়োগে ঘরেই সংরক্ষণ করা যাবে পেঁয়াজ
- সংশোধন করা হচ্ছে শ্রম আইন
- চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার সুপারিশ
- সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশকে ১২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে এডিবি
- অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশ
- এআই প্রযুক্তিতে চলবে সরকারি অফিস
- রেলপথে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে খুলনা, শুরু জুলাই থেকে
- বাংলাদেশের রেল উন্নয়নে সহযোগিতায় আগ্রহী রাশিয়া
- বান্দরবানে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ
- বান্দরবানে কেএনএফের আরও দুই সদস্য কারাগারে
- প্রচারণা বন্ধ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে আশার ইঙ্গিত বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীরের
- প্রধানমন্ত্রী আজ দেশে ফিরছেন
- ফরিদপুরের ঘটনায় জড়িতদের ছাড় নেই
- তাপদাহে দেশে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড
- রুমায় সেনা অভিযানে দুই কেএনএ সন্ত্রাসী নিহত
- রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পাঁচ সন্ত্রাসী আটক
- বাজেট হবে জনবান্ধব
- চলতি মাসের ২৬ দিনে এলো ১৬৮ কোটি ডলার
- মে থেকে বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করবে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ও এয়ার চায়না
- চলতি বছর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা শুরু করবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড
- কোরবানির জন্য এক কোটি ৩০ লাখ গবাদিপশুর জোগান রয়েছে: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী
- স্কুলে থাকবে না দ্বিতীয় শিফট
- রোগীর প্রতি অবহেলা বরদাশত করব না
- বদলি হলেও চাকরিতে যোগদান করেননি নাথান বমের স্ত্রী
- কেএনএফের ২ জনকে রিমান্ড শেষে জেল হাজতে প্রেরণ
- মিয়ানমারের সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি
- প্রধানমন্ত্রী আজ দেশে ফিরছেন
- বৃষ্টির জন্য আগামীকাল বান্দরবানে নামাজ অনুষ্ঠিত হবে
- পরিবহন ধর্মঘটে বান্দরবানে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
- হুট করে হামলা শক্তির চেয়ে নিজেদের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ
- বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএর সন্ত্রাসী নিহত
- বান্দরবানে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ
- রুমায় সেনা অভিযানে দুই কেএনএ সন্ত্রাসী নিহত
- বান্দরবান পৌর এলাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
- স্বামী সংসার স্বাভাবিক করতে সহযোগিতা চায় রুনা ত্রিপুরা
- বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন চহ্লামং মারমা
- বান্দরবানে কেএনএফের আরও দুই সদস্য কারাগারে
- কেএনএফ সংগঠনের সাথে জড়িত সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতা সহ গ্রেপ্তার ৭
- প্রচারণা বন্ধ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে আশার ইঙ্গিত বর্তমান চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীরের
- নতুন ১১ জেলা যুক্ত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্কে
- রুমায় সেনা অভিযানে ২ কেএনএফ সদস্য নিহত অস্ত্র উদ্ধার
- বহিষ্কার হলেন রুমা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি
- সেনা অভিযানে কেএনএফ সদস্য নিহত