শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||
বৈশাখ ৫ ১৪৩১
|| ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৩
বাংলাদেশে ব্যবহৃত ০১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি পণ্য তৈরিতে রাবার প্রয়োজন হয়। আর এই হিসাবে দেশে রাবারের যথেষ্ট চাহিদা থাকার কথা। আশির দশকে রাবারের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করেই একে ‘সাদা সোনা’ নামে অভিহিত করা হয়।এমনকি রাবারের চাহিদা ও জোগানের সমতা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোক্তাদের আগ্রহের কারণে রাবার চাষ বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছিল ।
দেশে এখন ৭০ হাজার একর জমিতে রাবার চাষ হচ্ছে । পার্বত্য এলাকায় প্রায় ৩১ হাজার একর জমিতে সরকারিভাবে এবং ৩৯ হাজার একর জমিতে বেসরকারি উদ্যোগে রাবার চাষ হচ্ছে। সারা বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১৫ হাজার টন রাবার উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে বিদেশে রফতানি করা হয় কমবেশি ৪ হাজার টন। রাবার বাগান মালিক সমিতির সভাপতি শিল্পপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, বাংলাদেশে রাবার চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশে যে অল্প পরিমান রাবার উৎপাদন হয় তার একটি অংশ বিদেশেও রফতানি করা হয়। দেশে যেমন এই রাবারের চাহিদা আছে বিদেশেও এর চাহিদা কম নয়। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ বর্তমানে প্রধানত ভারত ও মালয়েশিয়ায় রাবার রপ্তানি করে থাকে। সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আরও জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের রাবার শিল্প বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় খাতে পরিণত হতে পারে । তার মতে রাবারের জন্য আমাদের দেশের পাশেই ভারতের মত একটি বড় বাজার রয়েছে। তাই সরকারের উচিত রাবার চাষে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এই সম্ভানাময় খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বান্দরবান জেলাসহ লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ির এলাকায় গড়ে কয়েক শতাধিক রাবার বাগানের গাছ থেকে প্রতিদিন রস আহরণ করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে রাবার চাষের কারনে বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অর্থনীতির চিত্র ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। এসব রাবার বাগানে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে প্রায় ৫০ হাজারের মতো শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে থাকে। পাহাড়ের অন্য উপজেলায়ও রাবার চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। লাভজনক হওয়ায় রাবারকে ‘সাদা সোনা’ বলা হয়ে থাকে। বান্দরবান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রাবার চাষের জন্য ১৯৮৭ সালে প্রথমবারের মতো প্রত্যেক চাষী/ব্যক্তিকে ২৫ একর করে (৪০ বছর মেয়াদি প্লট) লিজ দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। জেলা প্রশাসকের লিজের বাইরেও এসকল উপজেলায় ব্যক্তিমালিধীন কয়ক’শ রাবার বাগান গড়ে ওঠেছে।
রাবার শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চারা লাগানোর ০৭ বছর পরই রাবার উৎপাদন শুরু করা যায়। প্রতিটি গাছ থেকে উৎপাদনের প্রথম ধাপ হতে ২৫ বছর পযর্ন্ত নির্দিষ্ট সমহারে রাবার উৎপাদন হয়ে থাকে। একটি গাছ থেকে গড়ে বার্ষিক ৩৫ কেজি ল্যাটেক্স (তরল সাদা কষ) পাওয়া যায়। প্রতি কেজি ‘গ্রেড -১’ রাবার ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়ে থাকে। প্রথমে নতুন কোনো রাবার বাগান করতে গেলে উচ্চফলনশীল জাতের ১১ কিংবা ২১ মাস পদ্ধতির নার্সারি তৈরি করতে হয়। এক দিনে একটি গাছ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম থেকে ৩৫০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কষ পাওয়া যায়।
এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আরিফ রাবার এস্টেটের মালিক মো. আলাউদ্দিন বলেন , নাইক্ষ্যংছড়ির রাবারশিল্প বর্তমানে কিছুটা হুমকির মুখে। বিদেশ থেকে রাবার আমদানি কমানো গেলে দেশীয় রাবারশিল্প রক্ষা পাবে। তা করা না গেলে দেশীয় রাবারশিল্প অচিরেই ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ যেসকল রাবারের চারা আমদানি করা হয় তা আরআরআইএস-৬০০ প্রজাতির। অথচ বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আরও উন্নত মানের আরআরআইএস-৩৪০০ প্রজাতির চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশে উৎপাদিত রাবার গাছগুলো থেকে অন্তত সাত গুণ বেশি রাবার উৎপাদন সম্ভব। সরকার চাইলে বাংলাদেশেও উন্নত প্রজাতির গাছ আমদানি করে আরও বেশি রাবার উৎপাদন করা সম্ভব।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, ব্যয়বহুল হওয়ায় এ ব্যাপারে বিগত সরকারের তেমন আগ্রহ ছিল না। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আলাদা রাবার গবেষণা কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা হয়নি। বর্তমান সরকারের যোগ উপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে রাবার শিল্প এখন চাঙ্গা। সরকার চাইলে রাবার র্বোড গঠন করে এশিল্পকে নতুন জীবন দিয়ে আধুনিক করে গড়ে তুলতে পারে। উল্লেখ্য, রাবার দিয়ে বর্তমানে গাড়ির টায়ার, টিউব, জুতার সোল, ফোম, রেক্সিন, হোসপাইপ, গাম, খেলনা এবং কারখানার বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরি করা হচ্ছে।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়