মৈত্রী পানি বর্ষনে মেতেছে পাহাড়ের ৯টি সম্প্রদায়

মাহা সাংগ্রাই, বিজু, বিষু, বৈসু, চাংক্রান, সাংক্রাইং, সাংলান নামের ভিন্নতা থাকলেও পার্বত্য বান্দরবানে পাহাড়ের প্রানের উৎসবে জাতী, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাহাড়ের ৯টি সম্প্রদায় আজ একসাথে মেতেছে মাহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ মৈত্রী পানি বর্ষণ খেলার এ আয়োজনে।

প্রতি বছরের মতো নতুন বছরের আগমনে এবারও ১৩৮৫ ম্রাইংমা, নঃসই, সাক্করই ও ১৪৩০ বঙ্গাব্দ উদযাপনের লক্ষ্যে ২৭শে এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বান্দরবানের বালাঘাটা কেন্দ্রীয় উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে ২য় মৈত্রী পানি বর্ষণ ও ঐতিহ্যবাহী লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং। প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য মন্ত্রী বলেন- "বান্দরবান সম্প্রীতির মিল বন্ধনের একটি জেলা, ১১টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সহ-অবস্থানের এই জেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বর্ষবরণের ভিন্নতা থাকলেও আজকের আয়োজনে এখানে ৯টি সম্প্রদায়ের মৈত্রী পানি বর্ষণের আয়োজন সত্যিকারার্থে পাহাড়ের সম্প্রীতির সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছে"।

মন্ত্রী আগামীতে আরো বড় পরিসরে সকল সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে উৎসব আয়োজনের জন্য উৎসব উদযাপন কর্তৃপক্ষকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন। এসময় পার্বত্য মন্ত্রী ও আগত অতিথি বৃন্দ পানি ছিটিয়ে সাংগ্রাই পোয়েঃ মৈত্রী পানি বর্ষণের শুভ সূচনা করেন।

উৎসবে পাহাড়ের ৯টি সম্প্রদায় আলাদা আলাদা স্টলে তাদের তৈরী হস্তশিল্পের পণ্য প্রদর্শনী সহ নানাধরণের ঐতিহ্যগত তৈরী পিঠা প্রদর্শনী দেন যা আগত সকল দর্শনার্থীদের জন্য ছিলো উন্মুক্ত। 
তাছাড়া, আগত দর্শনার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। গান ও নৃত্যের মাধ্যমে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের শিল্পীদের আলাদা আলাদা অংশগ্রহণ ফুটিয়ে তুলেছে তাদের নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য ও কৃষ্টি কালচারকে ।

এসময় বালাঘাটা উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ২নং কুহালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মংপু মারমা এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য মন্ত্রীর সহধর্মিণী মিসেস মেহ্লা প্রু মারমা, জেলা পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম পিপিএম, উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াছির আরাফাত, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী মাজিস্ট্রেট রাজিব কুমার বিশ্বাস, পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সৌরভ দাশ শেখর, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি অমল কান্তি দাশ, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম শহীদুল ইসলাম, বান্দরবান প্রেস ক্লাবের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বাচ্চু, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের  উপধর্ম বিষয়ক সম্পাদক উসিংহাই রবিন বাহাদুর।

এছাড়াও অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা, জেলা আওয়ামী লীগ এর নেতৃবৃন্দ সহ ৯টি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং শেষ বারের মতো মহা সাংগ্রাই পোয়েঃ মৈত্রী পানি বর্ষণে আসা হাজারও দর্শনার্থী। এসময় পৌরসভার ১, ২ ও ৩নং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর দীপিকা রানি তঞ্চঙ্গ্যা বলেন- "এইবারই প্রথম বান্দরবানের ৯টি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে সাংগ্রাই, বিজু উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ জন্য আমরা সকলে আনন্দিত, আগামীতেও সকলের সমন্বয়ে এ ধরনের উৎসব পালনের আশাবাদ ব্যাক্ত করছি"।

উল্লেখ্য গত ১২ই এপ্রিল থেকে মাহাঃ সাংগ্রাইং পোয়ে উৎসব শুরু হয়েছে। ১৪ই এপ্রিল ছিল বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, ১৫ই এপ্রিল থেকে বিভিন্ন সম্প্রদায় অধ্যূষিত গ্রাম গুলোতে সপ্তাহ ব্যাপী উৎসব মূখর পরিবেশে সাংগ্রাইং রিলং পোয়ে (মৈত্রী পানি বর্ষন ) খেলাসহ ঐতিহ্যগত বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো মহাঃ সাংগ্রাই পোয়েঃ।