বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||
চৈত্র ১৪ ১৪৩০
|| ১৭ রমজান ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২৩
সেনাবাহিনীর দখলে এল কেএনএফ এর আরও একটি শক্ত ঘাঁটি। কোন রকম প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেনি কেএনএফ এর তথাকথিত অকুতোভয় কমান্ডোরা। পাল্টা প্রানভয়ে দিশেহারা হয়ে ছুটেছে দ্বিগিদিক। টেনে নিয়ে গেছে হতাহত সতীর্থদের। ঘটনাটি ঘটেছে আজ ২৯শে মে ২০২৩ তারিখ বেলা ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে বান্দরবানের রুমা উপজেলার থিনদলতে ত্লাং নামক স্থানে। সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল কেএনএফ এর উক্ত ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে আজ সকালে একটি অভিযান পরিচালনা করলে কেএনএফ এর সদস্যরা প্রানভয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, বিস্ফোরক, স্থাপনকৃত আইইডি ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জামাদি। সেনাবাহিনীর আভিযানিক দলটি এখন এলাকাটিকে সর্বসাধারনের জন্য নিরাপদ করে তুলতে এর আশেপাশে কেএনএফ এর পুঁতে রাখা আইইডি’র সন্ধান করে তা উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত শনিবার দুপুরে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করে খুব সহজেই কেএনএফ এর থিংদলতে পাড়া ঘাঁটিটি দখল করে নেয়। মাত্র একদিন পরেই সেনাবাহিনীর এই পূনঃসাফল্য অত্র এলাকার মানুষের মাঝে অনেকখানি স্বস্তির বার্তা বয়ে এনেছে বলে এলাকাবাসি মনে করেন। পরপর দু’টি সফল অভিযান সেনাসদস্যদের মনোবলকেও অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে। অচিরেই বান্দরবান জেলা কেএনএফ সন্ত্রাসীদের অত্যাচার থেকে মুক্ত হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বান্দরবান রিজিয়নের নবাগত রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেঃ জেনাঃ গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ এসজিপি, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি পিএইচডি।
গত ১৬ই ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে ফেসবুক পেজে ঘোষনা দিয়ে উত্থান হয় নাথান বম এর এই সন্ত্রাসী বাহিনীর। কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এই বাহিনীর উত্থান বলে নাথান ঘোষনা দিলেও নাথানের পথ ও পন্থাকে ঘৃনাভারে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশের কুকি-চিন জনগোষ্ঠী প্রেস ব্রিফিং করে। এর পর থেকেই সাধারণ জনগণের ওপর শুরু হয় কেএনএফ এর সন্ত্রাসীদের হুমকি-ধামকি, অপহরণ, অত্যাচার, খুন ও ব্যাপক চাঁদাবাজি। বান্দরবানের প্রত্যন্ত এলাকার কিছু কুকি-চিন পাড়ার নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে কেএনএফ এর সন্ত্রাসীরা গড়ে তোলে তাদের শক্ত ঘাঁটি। কেএনএফ এর উত্থানের পর থেকেই সেনাবাহিনী অভিযানে নামে। তবে কেএনএফ এর জিম্মায় থাকা সাধারণ মানুষদের ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় সেনাবাহিনী শক্ত অভিযান পরিচালনা করতে পারেনি। এদিকে জঙ্গিদের সাথে কেএনএফ এর সরাসরি সম্পৃক্ততার ব্যাপারে সম্পূর্নরূপে নিশ্চিত হওয়ার পর গত ০৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখ থেকে শুরু হয় সেনাবাহিনী ও র্যাব এর জঙ্গি ও কেএনএফ বিরোধী যৌথ অভিযান। এতে ধরা পড়ে অধিকাংশ জঙ্গি ও কিছু কেএনএফ সদস্য। এতে কেএনএফ ক্ষুব্ধ হয়ে সেনাবাহিনীর উপরে চড়াও হয়। সেনাবাহিনীকে সহায়তার দায়ে নিরীহ মানুষের উপরও চালায় অবর্ননীয় অত্যাচার ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ। ফলে এবছরের এপ্রিলের শুরুতে পূনরায় মাঠে নামে সেনাবাহিনী।
এবারের অভিযানে সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি যুক্ত রয়েছে বিজিবি। যৌথ বাহিনীকে পুর্নাঙ্গ সহায়তা দিয়ে চলেছে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিরা। সম্প্রতি সেনাবাহিনীর একের পর এক আক্রমণে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা কিছুটা দূর্বল হলে কেএনএফ এর জিম্মা থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে সাধারণ মানুষেরা। বর্তমানে তারা বিভিন্ন উপজেলা সদর এলাকার নিরাপদ স্থানে অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে সেনাবাহিনী কেএনএফ এর উপর প্রকৃত সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে পারছে বলেই একের পর এক কেএনএফ এর ঘাঁটি সেনাবাহিনীর দখলে আসছে মর্মে জানান রুমা জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্ণেল হাসান শাহরিয়ার ইকবাল, পিএসসি। বান্দরবান থেকে কেএনএফ সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎখাত করার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার এই অভিযানে স্বতঃস্ফুর্ত সহায়তা প্রদানের জন্য তিনি এলাকাবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
উল্লেখ্য, বান্দরবানের রুমা উপজেলায় কেএনএফ নামক সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠনটি দীর্ঘদিন যাবৎ দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। সম্প্রতি কেএনএফ সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে অত্রাঞ্চলে সেনা ও বিজিবি এর যৌথ অভিযান চলমান রয়েছে।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়