শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ||
আশ্বিন ১৮ ১৪৩১
|| ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৫ মে ২০২৪
পথের ধারে বাশের ছাউনির দোকান গুলোতে রকমারী ফলমূলের পসরা সাজিয়ে,হরেকরকমের মৌসুমি ফল দিয়ে মুখরোচক মসলার মিশ্রণে সালাদ বানিয়ে প্লাস্টিকের বক্সে করে থরে থরে সাজানো রয়েছে।বাঁশের মাচাংয়ে বসে এক সাগর চিন্তার ভেলায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কয়েকজন পাহাড়ি নারী। তাদের সামনের টেবিলটাতে সাজানো আম,আনারস,পেয়ারা,পেপে সহ হরেক রকমের নিজেদের বাগানে চাষাবাদ করা তরতাজা ফলমূল।
বান্দরবান জেলা সদরের নিকটবর্তী অন্যতম দর্শনীয় পর্যটন স্পট শৈল প্রপাত।বছরের এই সময়টাতে এই পর্যটন কেন্দ্রে দেশের বিভিন্ন জেলা হতে আগত পর্যটকদের পদচারণায় কোলাহলে ভরপুর থাকে।তবে এখনের চিত্র সম্পূর্ণ অন্যরকম,চিরচেনা প্রকৃতির মাঝে নেই আগত পর্যটকের কোলাহল, নিস্তব্ধতার চাদরে নিজের আপন সৌন্দর্যে স্বরূপ ফিরে পাচ্ছে প্রকৃতি।এই পর্যটন কেন্দ্রটির উপর ভিত্তি করে এর আারপাশে গড়ে উঠেছে পাহাড়ি হস্তশিল্পের তৈরী পোষাকের দোকান সহ ৮-১০ টি ফলের দোকান।মূলত এই এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের জীবন ও জীবিকার অন্যতম উৎস এখানে বেড়াতে আশা পর্যটক।
পাহাড়ি পল্লীর জনসাধারণ নিজেদের বাগানে উৎপাদিত বিভিন্ন ফলমূল ভালো লাভের আশায় এখানে বিক্রির জন্য আনে। স্থানীয় পাহাড়ি পল্লীতে নিজেদের তৈরী কোমর তাতের বিভিন্ন পোষাক,হাতে তৈরী ব্যাগ,চাদর,বাঁশের তৈরী আসবাবপত্র সহ ঘর সাজানোর হরেক রকমের হস্তশিল্পের পণ্য সামগ্রী স্বল্পমূল্যে বিক্রি হয় পর্যটন কেন্দ্রর সামনে গড়ে উঠা দোকান গুলোতে।স্থানীয় দোকানীরা সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে এক অজানা আতংকে নিজেদের নাম পরিচয় দিতে অনিহা প্রকাশ করায় নাম উল্লেখ না করার শর্তে প্রতিবেদক কে জানায় আমরা এখন অনেক অসুবিধায় দিন পার করছি।শুনেছি বম জনগোষ্ঠীর অনেক যুবক কেএনএফ এর সাথে জড়িয়ে গেছে।তাদের কারনে এলাকায় এখন বম সাধারণ পরিবার গুলো আতংকে থাকে।অনেক বম পরিবার পুরুষরা ভয়ে পালিয়ে গেছে, বাগানের ফলন তোলার মানুষ নেই।বম নারীরা বাগান থেকে ফলন তুলে নিজেরাই বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আশে।এখানে পর্যটক না আসলে এগুলো কে কিনবে!এটাই এখন প্রতিদিনের দুশ্চিন্তা।
পার্বত্য বান্দরবানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা পরবর্তী পর্যটন শীল্প ঘুরে দাড়ানোর পরিবেশ ফিরে আসলেও গত এক বছরেরো অধিক সময় ধরে পার্বত্য বান্দরবানে আঞ্চলিক পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফ এর অপতৎপরতা বৃদ্ধির কারনে আইনশৃঙ্খলা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা জনিত কারনে স্থানীয় প্রশাসনের কয়েক দফা পর্যটক ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সহ সাম্প্রতিক সময়ে সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ রুমা ও থানচি উপজেলায় সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতি,ব্যাংক ম্যানেজার অপহরণ,ব্যাংকের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ ও আনসার সদস্যের অস্ত্র লুটের ঘটনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে জেলা সদর ইউনিয়ন সহ রুমা,থানচি,রোয়াংছড়ি উপজেলায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চলমান আছে।বর্তমান চলমান পরিস্থিতিতে গেলো কয়েকমাসে জেলায় পর্যটকের আগমন প্রায় অর্ধেকেরো বেশী নেমে গেছে।
যার প্রভাবে বেশির ভাগ পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে প্রায় পর্যটক শুন্য থাকে,ফলে পর্যটন কেন্দ্র কে উপলক্ষ করে গড়ে উঠা পাহাড়ি জনসাধারণের দোকানগুলোতে বেচাকেনা খুবই সীমিত।জেলা সদরের প্রায় সবগুলো পর্যটন কেন্দ্র নির্ভর দোকানপাটের একই চিত্র। তারপরেও জীবন ও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন তাদের দোকান গুলো খুলে হরেক রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকে আগত পর্যটকদের কাছে নিজেদের পণ্য সামগ্রী বিক্রির আশায়।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়