সোমবার ২০ মে ২০২৪ ||
জ্যৈষ্ঠ ৬ ১৪৩১
|| ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২২
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের সমর্থনে দৃঢ়ভাবে পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। একই সাথে তারা রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণ মোকাবেলা করে এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ঢাকায় ১৪টি পশ্চিমা দেশের মিশন প্রধানরা এক যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা, সুরক্ষা ও শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকার, জাতিসঙ্ঘ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে একযোগে কাজ করব। বাংলাদেশে অবস্থানকালে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও মর্যাদার সাথে জীবন যাপন করার সক্ষমতাকে আমরা গুরুত্ব দেই, একই সাথে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের মিয়ানমার ফিরে যাওয়াকে আমরা সমর্থন করি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে আমরা সমর্থন দিয়ে যাব।
মিয়ানমারের বিভিন্ন স্থানে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সামরিক বাহিনীর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে উদ্বেগ প্রকাশ করে মিশন প্রধানরা বলেন, মিয়ানমারে বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটাতে হবে। রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নৃশংসতা চালানোর সাথে জড়িতদের আন্তর্জাতিক জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। রোহিঙ্গাদের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত কিছু ব্যক্তির ওপর আমাদের দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের রাজনৈতিক ও মানবিক সঙ্কটের সমাধান আমরা চাই। আর এই সমাধান অবশ্যই রোহিঙ্গাদের নিয়েই করতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে প্রায় আট লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাধ্য হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার ভয়ঙ্কর ঘটনাপ্রবাহকে আমরা স্মরণ করছি। এই বাস্তুচ্যুতির মুখে রোহিঙ্গাদের অবিশ্বাস্য সহনশীলতা ও সাহসকে আমরা স্বীকৃতি দেই। রোহিঙ্গাদের অব্যাহতভাবে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উদারতার জন্য আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। বিবৃতিদাতারা হলেন, ব্রিটিশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মান, ইটালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়, স্পেন, সুইডেন এবং সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত। এদিকে জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার প্রধান মিশেল ব্যাচেলে গতকাল জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দেশটির বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। আকাশ থেকে হামলা চালানো হচ্ছে। আর্টিলারি ব্যবহার করা হচ্ছে। রাখাইন রাজ্যেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সঙ্ঘাতে রোহিঙ্গারা প্রায় হতাহত হচ্ছে। অনেক অভিযানে রোহিঙ্গাদের সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের বিচ্যুতিগুলো নথিভুক্ত করছি। বাংলাদেশে চার দিনের সফর শেষে গতকাল দেয়া এক বিবৃতিতে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত নয়েলিন হেইজার বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির পাঁচ বছর পরও বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে অব্যাহতভাবে উদারতা দেখিয়ে আসছে। তবে শরণার্থীদের এই বোঝা ভাগাভাগি করে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক দেশগুলোকে আরো সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে। এই সঙ্কটের সমন্বিত, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান বের করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এই সঙ্কটকে আমরা ভুলে যেতে পারি না।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়