মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ৩০ ১৪৩১
|| ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২২
জন্ম ও শৈশব
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় পুত্র শেখ জামাল ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। অন্য ভাই-বোনের মত তাকেও পিতৃস্নেহ বঞ্চিত হয়ে বেড়ে উঠতে হয়েছে। কারণ, পিতা মুজিবকে বেশিরভাগ সময় জেলেই কাটাতে হয়েছে, আর জেলের বাইরে এলেই তিনি পূর্ববাংলার মানুষের ভাগ্য বদলে দেবার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতেন। জামাল ভূমিষ্ট হওয়ার ১২ দিন পর অর্থাৎ ১০ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সরকারের কৃষি, ঋণ, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন শেখ মুজিব। শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি পরিবারকে একটু সময় দেওয়ার প্রবল আকাঙক্ষায় ছোট্ট শিশু শেখ জামালসহ তার পরিবারকে টুঙ্গিপাড়া থেকে ঢাকায় মিন্টু রোডের সরকারি বাসভবনে স্থানান্তর করেন।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ৩০ মে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের ৯২(ক) ধারা জারি করে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত করে, পূর্ব বাংলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে এবং শেখ মুজিবসহ সকল মন্ত্রিসভা সদস্যকে গ্রেফতার করে। সেই প্রেক্ষাপটে সরকার মিন্টু রোডের সরকারি বাড়ি ১৪ দিনের মধ্যে ছাড়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই ওই বাসা ছেড়ে বঙ্গমাতা বেগম মুজিব ছোট-ছোট ছেলে-মেয়ে নিয়ে নাজিরা বাজারে একটি ভাড়া বাড়িতে (সুলতানদের বাড়ি) উঠেন। পিতার অত্যন্ত আদরের জামাল মায়ের কোলে চেপে অপলক দৃষ্টিতে বন্দি বাবাকে দেখত জেল গেটে। সেবার শেখ মুজিব মুক্তি পেয়েছিলেন ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ। নিয়মিত কারাবরণই ছিল যেন তার ভাগ্যরেখায়। পিতা মুজিব জেলে থাকলেও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হওয়ার প্রতিক্ষায় থাকতেন। জেলের নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিন পরপর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পেতেন। ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ও স্বাস্থ্যের খবর রাখতেন। সন্তানদের কেউ জেলগেটে না এলে উদ্বিগ্ন থাকতেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে উঠেন। এর পূর্বে তারা নাজিরাবাজার, আরমানীটোলা, আবার নাজিরাবাজার, ১৫ নম্বর আব্দুল গণি রোড, সেগুনবাগিচার ১১৭ নম্বর বাড়ি, ১১৫-সিদ্ধেশ্বরী, পুনরায় সেগুনবাগিচার ৭৬ নম্বর বাড়িতে থাকতেন। সেগুনবাগিচার বাসা থেকে শেখ জামাল ভাই-বোনসহ নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণের জন্য রমনা পার্কে যেতেন। প্রাতঃভ্রমণ শেষে বাসায় ফিরে পরিবারের সকলেই পত্রিকা নিয়ে বসতেন। বরাবরের মতই বঙ্গবন্ধুর নজর থাকত রাজনৈতিক খবরে; বঙ্গমাতার আগ্রহ ছিল সামজিক বিষয়ে, শেখ কামাল খেলাধুলার খবরে, আর জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ সন্তান আমদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পড়তেন সাহিত্য পাতা ও চলচ্চিত্র সংবাদ। শৈশব থেকেই শেখ জামাল ছিলেন অত্যন্ত হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত। কিশোর বয়সে তার অলরাউন্ডার বড়ভাই ক্যাপ্টেন শেখ কামালের মত তিনিও হয়ে উঠেছিলেন ক্রীড়ানুরাগী। তিনি ক্রিকেট, হকি ও ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি আবাহনীসহ কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি দেশ-বিদেশের খেলাধুলার খবর রাখতেন। লেখাপড়া ও খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি ছায়ানটে গিটার শিখতেন। শেখ জামাল অত্যন্ত বন্ধু বৎসল ছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে রেস্টুরেন্টে খেতে পছন্দ করতেন, কখনও বা সিনেমা-নাটক দেখতে যেতেন। তিনি মুরুব্বিদের অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। শেখ জামাল ছিলেন অত্যন্ত পড়ুয়া প্রকৃতির; সারাক্ষণ তিনি বই নিয়ে পড়ে থাকতেন। তিনি কিছুদিন বিমান বাহিনীর শাহীন স্কুলে পড়ছেন। এরপর ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখানে ছাত্রাবাসে থাকতেন। তিনি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়