মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ৩০ ১৪৩১
|| ০৫ জ্বিলকদ ১৪৪৫
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
শেখ রেহানা ১৯৭৫ সাল। কিশোরী শেখ রেহানা। পরিবারের সব সদস্য নিহত হওয়ার কথা শুনে দুই বোন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা নিজেদের জন্যও মৃত্যু কামনা করেছিলেন। তবে এর পর দিনে দিনে নিজেদের সামলে নিয়েছেন তারা। ঘুরে দাঁড়িয়েছেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। লন্ডনে পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রেহানা। দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হয়েও শেখ রেহানা কখনো রাজনীতিতে আসেননি। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সক্রিয় রাজনীতিবিদদের অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা দিয়ে গেছেন সবসময়। এসব আন্দোলন-সংগ্রাম এবং আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে বড় বোন শেখ হাসিনার পাশে থেকে সহযোগিতা করে গেছেন রেহানা। দেশ ও জাতির কল্যাণে অনেকটা নেপথ্যে থেকেই ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুর এ কনিষ্ঠ কন্যা। জনহিতৈষী কাজেও সবসময়ই ভূমিকা রয়েছে রেহানার। মানবিক হৃদয়ের জন্য মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছেন তিনি। যিনি সাধারণ হয়েও অসাধারণ। এছাড়া ধানমন্ডিতে তার নামে বরাদ্দ বাড়িটিও দিয়েছেন দেশের কাজে। বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা সবার কাছে ‘ছোট আপা’ বলে পরিচিত। ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে (সংস্কারের নামে) যে বিভক্তিকরণ দেখা দিয়েছিল, তা রুখতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন রেহানা। শেখ হাসিনা তখন জেলে। সে সময় পর্দার অন্তরালে থেকে দলের ঐক্য বজায় রাখতে ব্যাপক ভূমিকা নিয়েছিলেন শেখ রেহানা। দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় তুলে ধরেন সাহসী উচ্চারণ। এছাড়া পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: এ ডটার'স টেল’-এ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যখন রাজনীতি শুরু করি, তখন জয় ও পুতুলের ভবিষ্যৎ শিক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে তাদের বাইরে পড়তে পাঠানোর বিষয়ে শেখ রেহানার ছিল অনমনীয় সিদ্ধান্ত।’ শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব নেতৃত্বের অংশীদার, তার পেছনে অন্যতম উৎসাহ শেখ রেহানার। শান্তির আলোকবর্তিকা হাতে আজ বিশ্বময় শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রেও রেহানার ইতিবাচক ভূমিকা স্মরণীয়। সজীব ওয়াজেদ জয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে শেখ হাসিনার অন্যতম ভরসার জায়গা জয়। বাংলাদেশের একজন তরুণ আইকন বঙ্গবন্ধু পরিবারের এ সদস্য। লেখাপড়া করা অবস্থায় রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত থাকলেও তিনি সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে নাম লেখান ২০১০ সালে। ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিতৃভূমি রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ দেয়া হয় তাকে, যার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে আসেন জয়। ২০০৭ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘গ্লোবাল লিডার অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টি নিয়ে আসেন। পর্দার অন্তরালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে থেকে গোটা দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লব ঘটান এ তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। দলীয় ঘরানা ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তি, রাজনীতি, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশ, তরুণ উদ্যোক্তা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন জয়। বিশেষ করে দেশের তরুণদের দেশপ্রেমে উজ্জীবিত করে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে আত্মনিয়োগ করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি ও পদক্ষেপ নিচ্ছেন তিনি। শিক্ষাগত যোগ্যতা আর পেশাগত কাজের অভিজ্ঞতা—এই দুইয়ের মিশেলেই দেশের আইসিটি খাতের এমন ত্বরিত উন্নতিতে সফল নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন জয়। দেশ গঠনে তরুণদের মতামত, পরামর্শ শুনতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ‘লেটস টক’ ও ‘পলিসি ক্যাফে’ দুটি প্রোগ্রাম এরই মধ্যে সারা দেশে বেশ সাড়া ফেলেছে। এছাড়া তিনি তরুণ উদ্যোক্তা ও তরুণ নেতৃত্বকে একসঙ্গে যুক্ত করার পাশাপাশি তাদের প্রশিক্ষিত করতে তারুণ্যের বৃহত্তম প্ল্যাটফর্ম ‘ইয়াং বাংলার’ সূচনা করেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, দেশের সম্পদ। প্রয়োজন শুধু একটু মমতা, একটু ভালোবাসার। বাংলাদেশকে এমনই এক বাস্তবতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য উত্তরসূরি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এভাবে প্রধানমন্ত্রীর নানা কাজে সহায়তাও করছেন তিনি। সায়মা ওয়াজেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অটিজম আন্দোলনের ফলে অনেক অটিস্টিক শিশু মূলধারায় ফিরে আসছে। অসহায় পিতামাতা হতাশা কাটিয়ে পাচ্ছেন উৎসাহ, সাহস আর আশ্রয়। বিশ্বে অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে, যেখানে অটিস্টিক শিশুদের মধ্য থেকে তৈরি হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের শিশুরা সে পথেই হাঁটছে। সারা বিশ্বে অটিস্টিক শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা পুতুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য এবং একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী তিনি। সায়মা ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে পুতুলকে ‘হু অ্যাক্সিলেন্স’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকসের পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত হন। তার উদ্যোগে ২০১১ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মতো অটিজমবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক তরুণ প্রজন্ম নিয়ে নানা ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও সে অনুযায়ী শেখ হাসিনার রোডম্যাপে দেশ গঠনে সবাইকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছেন তিনি। রাদওয়ান মুজিব গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইর ট্রাস্টি হিসেবে কাজ করছেন। সিআরআইর অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘ইয়াং বাংলার’ মাধ্যমে তরুণদের ক্ষমতায়ন ও উদ্বুদ্ধকরণের কাজ করছেন তিনি। ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী ও ৩১৫টি সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে চলা ইয়াং বাংলার সদস্যসংখ্যা তিন লাখেরও বেশি। দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে তরুণ প্রজন্মকে সরাসরি অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্যে তাদের নতুন ধারণা ও উদ্ভাবনগুলো তুলে আনার জন্যই ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর রাদওয়ানের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে ‘ইয়াং বাংলা’ প্ল্যাটফর্ম। আনুষ্ঠানিক অভিযাত্রায় শরিক হয়েছিলেন দেশের ৬৪ জেলার ২৫০ তরুণ সংগঠনের প্রতিনিধি। তরুণ ও যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে রূপান্তরের ভিশন সামনে নিয়ে যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে, সেটা আরও গতিশীল করতে ‘তোমার জয়ে বাংলার জয়’ স্লোগানে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় তারুণ্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে রাদওয়ান মুজিবের নেতৃত্বে ‘ইয়াং বাংলা’ আত্মপ্রকাশ করা হয়। রাদওয়ানের তত্ত্বাবধানে প্রতিবছর সমাজ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়া যুব উদ্যোক্তা ও সংগঠনকে অনুপ্রাণিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ দেয়া হচ্ছে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে যেসব তরুণ উদ্যোক্তা ও সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে, তারাই পাচ্ছে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’। এ ছাড়া ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে রাদওয়ানের তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হচ্ছে ‘জয় বাংলা কনসার্ট’। জাতির পিতার জীবনী গ্রাফিক্যাল উপস্থাপনার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য ‘গ্রাফিক নভেল মুজিব’ প্রকাশের প্রধান কারিগর ও প্রকাশক তিনি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার দুই মেয়ে কীভাবে জীবনসংগ্রাম করেছেন, সেসব ঘটনা নিয়ে ডকুড্রামা ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ নির্মাণের নেপথ্যে ছিলেন রাদওয়ান। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক ইতিহাসের ঘটনাবলি সামনে আনার প্রকল্পগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করছেন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান। এছাড়াও সিআরআই থেকে প্রকাশিত নীতিনির্ধারণী ম্যাগাজিন হোয়াইট বোর্ডের প্রধান সম্পাদক তিনি।
dainikbandarban.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়