করোনা যুদ্ধে অপ্রতিরোধ্য শেখ হাসিনা
দৈনিক বান্দরবান
প্রকাশিত: ২০ মে ২০২০
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘সমস্যা’ প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘কেহ যখন রিক্তপাত্র লইয়া মাথায় হাত দিয়া ভাবিতে থাকে কেমন করিয়া তাহার পেট ভরিবে তখন তাহাকে এই কথাটি বলিলে তাহার প্রতি হিতৈষিতা প্রকাশ করা হয় না যে, ভালো করিয়া অন্নপান করিলেই ক্ষুধানিবৃত্তি হইয়া থাকে। এই উপদেশের জন্যই সে এতক্ষণ কপালে হাত দিয়া অপেক্ষা করিয়া বসিয়া ছিল না। সত্যকার চিন্তার বিষয় যেটা সেটাকে লঙ্ঘন করিয়া যতবড়ো কথাই বলি-না কেন, তাহা একেবারেই বাজে কথা।’
বাংলাদেশে কভিড-১৯ ইস্যুতে অভিযোগ পার্টি ও সরকারের সম্পর্ক ঠিক এমনই। জাতির ক্রান্তিকালে সরকারকে সহযোগিতা তো দূরের কথা, মানুষের প্রতি সহানুভূতি-সমানুভূতিনা জানিয়ে একের পর এক সমালোচনা করে যাচ্ছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু বাজে কথার ফুলঝুড়ি আওড়াননি, নাম সর্বস্ব উদ্যোগও গ্রহণ করেননি। বরং দেশ ও দশের কল্যাণে সত্যিকারের ‘বাস্তব সংকল্প’ নিয়ে ত্রাণকর্তার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্ত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে মহামারী রূপে ধারণ করলেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এখনও সুদৃঢ় অবস্থায় রয়েছে। নিশ্চিত হয়েছে যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থাও। যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ফোর্বস ম্যাগাজিন দাবি করছে, শঙ্কা থাকা স্বত্ত্বেও বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে করোনার লাগাম টেনে ধরতে পেরেছে সেগুলোর নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। বাংলাদেশের পাশাপাশি জার্মান, তাইওয়ান, আইসল্যান্ড , নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের কথা বলা হয়েছে ম্যাগাজিনটিতে। সেখানে আরো বলা হয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা এখনো কার্যকর করতে পারেনি যুক্তরাজ্য। ম্যাগাজিনের তথ্য, প্রায় ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের বসবাস বাংলাদেশে। সেখানে দুর্যোগ কোন নতুন ঘটনা নয়। আর এই করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি তিনি (শেখ হাসিনা)। তড়িৎ এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করে ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম (উই ফোরাম) পুরো বিষয়টিকে ‘প্রশংসনীয়’ বলে উল্লেখ করেছে।
তার নেতৃত্বেই সরকারি চাকরিজীবী থেকে কওমী মাদ্রাসা শিক্ষক, গার্মেন্টস কারখানা থেকে ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কুঠির শিল্প, জাহাজ শ্রমিক থেকে অসহায় দিনমজুর দান-প্রণোদনা থেকে বিরত রাখেননি কাউকেই। ভয়াবহ সঙ্কট মোকাবিলায় তড়িৎ গতিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৪ জন নার্স। যাদের দেশের বিভিন্ন কভিট-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে পদায়ন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এছাড়াও ৩৯তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে দুই হাজার চিকিৎসককে সহকারী সার্জন হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। করোনা-সঙ্কট মোকবিলার প্রশ্নে এত কিছুর পরও যখনসেই শেখ হাসিনা সরকারের গঠনবিরোধী সমালোচনা করা হয়, সত্যিই তখন অবাক হই।
পৃথিবীর সাড়ে সাতশ’ কোটি মানুষআজ এক সুতোয়জীবনযাপন করছে। কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন ও সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং এসব তাদের ভাষা।‘স্টে হোম, স্টে সেফ’ তাদের নীতিমালা। সবার পরিবার ও পরিবারেরবাইরের সঙ্গেযোগাযোগ, চব্বিশ ঘন্টার লাইফস্টাইল কিংবাঅবসর কাটানোর ধরণগুলোও একই রকম। বৈশ্বিক এমন পরিস্থিতিতে স্বভাবতই চিন্তা আসে, করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের অন্য দেশগুলো কী করছে, যেটা আমার বাংলাদেশ করছে না। অথবা কোভিড-১৯ থেকে পার্শ্ববর্তী কিংবা উন্নত বিশ্বের মানুষগুলো কতটা নিরাপদ, আর আমি কতটা?
বলে রাখা ভালো করোনাভাইরাসের সঠিক ও স্বীকৃত চিকিৎসা বিশ্বে এখনও আবিস্কৃত হয়নি। যা হয়েছে তা হলো রেমডেসিভি। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সেরা চিকিৎসা এটি।যদিও রেমডেসিভি রোগ ভালো করার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চয়তা দিচ্ছে না, তারপরও আশাব্যঞ্জক। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এটাকে কভিড-১৯-এর চিকিৎসায় ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। আমাদের জন্য সুখবর হলো, বাংলাদেশও এ সপ্তাহের মধ্যে ওষুধটি বাজারে আনছে। এত দ্রুত দেশীয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই ওষুধ তৈরির নজির পৃথিবীর আর কোন কোন দেশের স্থাপন করেছে নিশ্চয়ই তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।যদিও এর কিছুটা সমাধান গত ৯ মে প্রকাশিত ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় পাওয়া গেছে। ‘বিশ্বে প্রথম, জেনেরিক রেমডেসিভির তৈরির দাবি বাংলাদেশি সংস্থার’ শিরোনামে প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, এসকেএফই বিশ্বে প্রথম ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যারা জেনেরিক রেমডেসিভির তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এসকেএফ এই ওষুধটির বাণিজ্যিক নাম দিয়েছে রেমিভির।’
দক্ষিণ এশিয়ায় যে চারটি বড় দেশ সফলভাবে কভিড-১৯ মোকাবিলা করছে, এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। অর্থনীতি, রাজনীতিসহ নানাদিক থেকে শক্তিশালী হওয়া স্বত্ত্বেও মৃত্যুর হার এখনও বেড়েই চলেছে ভারত ও পাকিস্তানে। ইউনিভার্সিটি অব ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্টের দুজন অধ্যাপক দীপঙ্কর বসু ও প্রিয়াঙ্কা শ্রীবাস্তব এক গবেষণার দেখিয়েছেন, বাংলাদেশে মৃত্যু হার শুরুতে বেশি হলেও মাসখানেকের মধ্যে সরকার সেটিকে দুই শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সেদিক থেকে ভারত-পাকিস্তানের অবস্থা বেশ শোচনীয়। আক্রান্তে প্রায় একই হারে এগিয়ে চলা দেশ দুটির মৃত্যু হার সাড়ে তিন শতাংশেরও বেশি। ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান অধ্যাপকদ্বয় বলছেন, নানা কারণেই বাংলাদেশ-ভারতের সাফল্যের ছবি আমেরিকা ও ইউরোপের সঙ্গে তুলনীয় নয়। বরং সঠিক তুলনা হতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর পরিস্থিতির সঙ্গে। সে বিবেচনায় বাংলাদেশ ভালো আছে, তুলানামূলক উন্নতি করছে। আজ যখন দেখি, উন্নত দেশে বসবাসরত আমার দেশের হাজার হাজার প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তখন বাস্তবিক অর্থেই মুখ ফুটে বেরিয়ে আসে-ভালো আছে আমার বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মৃত্যুর হার দেশের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণের বেশি। অন্যদিকে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়গুণের বেশি। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৭টি দেশে প্রায় ছয় শতাধিক বাংলাদেশির প্রাণহানি হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি। উন্নত যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে থেকেও প্রাণ গেছে সাড়ে চারশ বাংলাদেশির। যেখানে সৌদি আরবে ৭৬, কুয়েতে ১৭, ইতালিতে ৮, কানাডায় ৭, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬, ফ্রান্স ও স্পেনে ৫, কাতারে ৪, সুইডেনে ২ এবং বেশ কয়েকটি দেশে ১ জন করে মারা গছে।
তবে একটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পাচ্ছি, চিকিৎসার অভাবে জনগণ সাধারণ চিকিৎসা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকেই কোভিড-১৯ ব্যতিত অন্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি হাসাপাতালগুলোতে গেলে চিকিৎসা পাচ্ছে না। এ ধরনের অনেক রোগী চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছে। এ দায় কার? এজন্য এই মুহুর্তে উচিত, নামি-দামি প্রত্যেকটি বেসরকারি হাসপাতালে যারা কভিড-১৯ ও যারা কোভিড-১৯ নন; তাদের জন্য পৃথক পৃথকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তা না হলে স্বাস্থ্যখাতের প্রতি সাধারণ মানুষের চরম অবিশ্বাস্য জন্মাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক চিকিৎসা খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করা স্বত্ত্বেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ডের জন্য তা প্রশ্নবিদ্ধ হবে, সেটি হতে পারে না।
দুই
স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণেও সদা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবের মত দেশ যখন বেসরকারি খাতের কর্মীদের যথাক্রমে ৮০% ও ৬০% ভাগ বেতন প্রদানের কথা জানিয়েছেন; বাংলাদেশ তখন আপৎকালীন ৫ হাজার কোটি বরাদ্দের মাধ্যমে সব গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতন ১০০% দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যা ইতোমধ্যেই শ্রমিকদের হাতে পৌঁছানো শুরু হয়েছে। এরপর আরো বেশ কয়েকটি প্যাকেজে মোট ১ লাখ কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন শেখ হাসিনার সরকার, যা মোট জিডিপির প্রায় কয়েক শতাংশ। এছাড়াও করোনা-কালে মানুষের জীবনযাত্রা ঠিক রাখতে প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদি করণীয় সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাংলাদেশে তো বটেই, তৃতীয় বিশ্বের জন্যও বড় উদাহরণ হয়েছে।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যত বড় বড় সিদ্ধান্ত দ্রুতগতিতে নিয়েছেন, তা পৃথিবীর আর কোন কোন রাষ্ট্র নিয়েছে, তার গবেষণার বিষয়। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতায় নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবি রাখে।আক্রান্তের পরপরই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবি তোলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন অনেকে। অনশন করেনঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার ছাত্র। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দায়ভার ও সুপারিশ ইস্যুত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরস্পর-পরস্পরকে দোষ চাপালেও সময় নেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ১৮ মার্চ দেশের সব প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন তিনি। যা আজ অবধি চলছে। ধারণা করি তাৎক্ষণিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী ওই সিদ্ধান্ত না জানালে আজ হয়তো শিক্ষিত সমাজে কমিউনিটি স্প্রেড ব্যাপার হারে বেড়ে যেত, আক্রান্তে যোগ হত শিক্ষার্থীদের নামের বড় একটি তালিকা। এই বিবেচনায় বলাই যায়, ভালো আছে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।
আবেগি বাঙালি জাতি বরাবরই হুজুগপ্রিয়। অবশ্য এর ইতিবাচক দিকও আছে। অনেকেই হয়তো জেনে থাকবেন, ইতিহাসের বড় বড় আন্দোলন এমনকি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধেও বৃহৎ অবদান রেখেছে এই হুজুগে কার্যকলাপ। ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী আন্দোলন- সিপাহী বিদ্রোহ তো পুরোটাই হুজুগ নির্ভর। ব্রিটিশ সরকারের এনফিল্ড রাইফেলের কার্তুজ পশুর চর্বি দ্বারা আবৃত ছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়ে কার্তুজে গরু ও শূকরের চর্বি মাখানো আছে। যেহেতু দাঁত দিয়ে কেটে বন্দুকে কার্তুজ তুলতে হত, স্বভাবতই তামুসলমান ও হিন্দু সৈনিকের সঙ্গেযায় না। তারা হুজুগে মেতে ওঠে। সংগঠিত হয় ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ।
কিন্তু বাঙালির সমস্যা তখনই হয়, যখন এই হুজুগপ্রিয় মানুষগুলো গুজবপ্রিয় হয়ে উঠে। নিকট অতীতে যার সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ ‘আহত ছাত্রের মৃত্যু’ ও ‘ছাত্রলীগ কর্তৃক ছাত্রীর পায়ের রগ কাটা’রগুজব ছড়িয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের স্বার্থ সিদ্ধি। হালের বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নিয়েও নানা মহলের সেই অপচেষ্টা চলছে। মনে পড়ে বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর অনেক বিষয়ের সঙ্গে অন্যতম যে বিষয়টি গুজব আকারে ছড়ানো হচ্ছিল, তাহলো ভেন্টিলেটরের স্বল্পতা। বিষয়টি নিয়ে প্রায় সবগুলো গণমাধ্যমও নানামুখি নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশে মেতে উঠে। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কতটা পিছিয়ে তথ্য তুলে ধরা হয় সেই প্রেক্ষাপটে। ‘বাংলাদেশে সাড়ে ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর জন্য ভেন্টিলেটর মাত্র ১৭৬৯টি’ শিরোনামে একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়, ‘কভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ভেন্টিলেটরের যে চাহিদা বাড়বে, তা পূরণ করা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এই মুহূর্তে দেশে ভেন্টিলেটর আছে ১৭৬৯টি। অর্থ্যাৎ প্রতি ৯৩ হাজার ২৭৩ জন মানুষের জন্য গড়ে একটি ভেন্টিলেটর।’ অথচ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে দেশে ভেন্টিলেটরের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা কয়েকটি।
বলে রাখা ভালো- করোনা আক্রান্ত ২ শতাংশ রোগীরও ভেন্টিলেটর প্রয়োজন হয় না। সে হিসেবে কাজে লাগা ভেন্টিলেটরের তুলনায় মজুদের সংখ্যা এখনও ঢের বেশি। বাস্তবিক অর্থে করোনাভাইরাসে জর্জরিত গোটা বিশে^ই এখন ভেন্টিলেটর সংকট। তারপরও পূর্বপ্রস্তুতি মাথায় রেখে প্রতিনিয়ত ভেন্টিলেটর সংগ্রহ করছে সরকার। তৈরি হচ্ছে দেশেও।
তবে একথা স্বীকার করতেই হবে যে, এন-৯৫ ও পিপিই নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে কেলেঙ্কারি করেছেন; তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও ভিডিও কনফারেন্সে এই প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং দপ্তর থেকে এ সম্পর্কে একটি ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করা হলেও তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভুলবশত শব্দ উল্লেখ করলে সেই অপরাধ কোনো কিছু দিয়ে ঢাকা যায় না। সরবরাহকারী মাল সঠিক মানের আছে কি না তা গুরুত্বসহ দেখার দায়িত্ব কর্তা ব্যক্তিদের। এজন্য কোনো সহকারীকে দায়ী করা যায় না। যদিও প্রকারন্তরে দেখা গেল, একজন পিএ’র উপর দায় চাপিয়ে অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই নিম্নমানের মাস্ক এবং পিপিই’র কারণে কারেনা যুদ্ধের সম্মুখযোদ্ধা আমাদের ডাক্তার, নার্স ও টেকনোলজিস্টরা অতিমাত্রায় আক্তান্ত হয়েছেন; যার ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ব্যহত হয়েছে, হচ্ছে। এটা কোনো লঘু অপরাধ নয়। রবং এই মুহূর্তে এটাকে হত্যার মামলার চেয়েও বড় অপরাধ বলা যায়। যে অপরাধের যথাযথ শাস্তি বিধান করা উচিত। কেননা এখানে অতিমাত্রায় দুর্নীতি করা হয়েছে বলেই সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে।দুর্নীতি দমন কমিশনের উচিত এটিকে অতি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আমলেনিয়ে জরুরি ভিত্তিতে জেএনআই কোম্পানীসহ অন্যান্য মালামাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
তিন
করোনার শেষ আঘাত কোথায় গিয়ে থামবে তা আমাদের সবার অজানা। দেড় মাসের বেশি সময় পরসম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত দিয়ে লকডাউন কিছুটা শিথিল করেছে সরকার। যা নিয়ে একটি শ্রেণি নানামুখী সমালোচনায় মেতে উঠেছেন।বলা হচ্ছে, করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ার কারণ এই শিথিলতা। খেয়াল করে থাকবেন, করোনা সংক্রমনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ যে দেশটি, সেই যুক্তরাষ্ট্রেও কিন্তু লকডাউন তোলার জন্য বিক্ষোভ হচ্ছে। এর মানে হলো খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে যাওয়া। গৃহে আবদ্ধ থাকার মতো পরিস্থিতি তাদের নেই। ‘দিনে এনে দিন খাওয়া’ পরিবারের মৃত্যুর উপক্রম হয়েছে। হ্যাঁ! ইতোমধ্যেই আয়ের পথ বন্ধ হওয়া মানুষগুলোকে সরাসরি সহায়তার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে দুই কোটি মানুষকে (৫০ লাখ পরিবার; পরিবার প্রতি চারজন) সরাসরি নগদ টাকা দেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন হয়েছে। যে সহায়তার আওতায় প্রতি পরিবার নগদ দুই হাজার ৪০০ টাকা করে পাবেন। এছাড়াও মাবাইল ব্যাংকিং পরিসেবার দ্বারা স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ও টিউশন ফি দেয়া হচ্ছে। গত ১৪ মে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখানে উল্লেখ্য যে, টাকা বন্টনের পুরো এই বিষয়টি কোনো মন্ত্রণালয় কিন্তু স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া হয়নি; বরং খোদ তদারকি করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ও তাঁর কার্যালয়।
এ তো গেল গ্রাম-গঞ্জের প্রান্তিক একটি শেণির কথা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্যও ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রাণোদনার ব্যবস্থা হয়েছে; বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস বিল পরিশোধের সময়সীমা সারচার্জ ছাড়া জুন মাস পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এনজিওগুলোর ঋণের কিস্তি পরিশোধ সাময়িক স্থগিতের। দিনমজুর, রিক্সা বা ভ্যান চালক, মটর শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক, পত্রিকার হকার, হোটেল শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার মানুষের জন্য ৭৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর চোখ এড়ায়নি শহর-বন্দর ও গ্রামে ওঠা হাজার হাজার কওমি মাদ্রাসাগুলোয়। এরমধ্যেপবিত্র রমজানের ঈদ উপলক্ষে দেশের ৬ হাজার ৯৭০টি কওমি মাদরাসায় দুই দফায় প্রায় ২০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে সরকার। যা ইতোমধ্যেই ইলেকট্রনিক ফান্ড টান্সফারের (ইএফটি) মাধ্যমে জেলা প্রশাসকদের ব্যাংক হিসাবে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
তারপরও ৭ কোটি মানুষের ঘরে মাসের পর মাস খাবার পৌঁছানোর সামর্থ সরকারের নেই; এটাই প্রকৃত বাস্তবতা। তাছাড়া অগণিত মানুষ চাকরির হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন। স্বভাবতই সরকারের লকডাউন শিথিলের বিষয়টি ভাবতে হয়েছে।তাছাড়া চিন্তা করতেই হয়, মরণব্যাধি এই ভাইরাস যদি দীর্ঘদিন সংক্রমণ অব্যাহত রাখে ও সে কারণে কর্মতৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দুর্ভিক্ষের মত পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে; যার ইঙ্গিত আফ্রিকার অনেক দেশের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিয়েছে। স্বভাবতই সব বিষয় মাথায় রেখে শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক দেশই লকডাউন শিথিল করেছে। তারপরও সমালোচনা আমাদের রক্তে মিশে আছে। জনবান্ধব সরকার জনকল্যাণমূলক যত উদ্যোগই গ্রহণ করুক না কেন, এক শ্রেণি তার পিঁছু নেবেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন, ‘দেশহিতের সংকল্প সম্বন্ধে যখন আমরা তর্ক করি তখন সেই তর্কের একটি প্রধান কথা এই যে, সংকল্পটি যতই বড়ো হোক এবং যতই ভালো হোক, বাস্তবের সঙ্গে তাহার সামঞ্জস্য আছে কি না। কোন্ ব্যক্তির চেক-বহির পাতায় কতগুলা অঙ্ক পড়িয়াছে তাহা লইয়াই তাড়াতাড়ি উৎসাহ করিবার কারণ নাই, কোন্ ব্যক্তির চেক ব্যাঙ্কে চলে তাহাই দেখিবার বিষয়।’
কালির কলমে চেক বইয়ের অংক বাড়িয়েছেন সামলোচকরা, জনগণের শেখ হাসিনা নয়। স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি উচ্চ নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ সব পেশাজীবি মানুষের জন্য নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে তিনি দেখাচ্ছেন, বাংলাদেশকে কীভাবে ভালো রাখা যায়, রাখতে হয়। তাই বলে আড্ডাপ্রিয় বাঙালিকে সঙ্গনিরোধ, গৃহ-অন্তরণ কিংবা আত্ম-অন্তরণ ভুলে গেলে চলবে না।
লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সদস্য উপদেষ্টা পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
- বান্দরবানে নিষিদ্ধ আফিমসহ নারী আটক
- থানচি অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে সহায়তা
- আলীকদমে মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত
- বান্দরবান পৌরসভার বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন
- চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে
- বঙ্গবন্ধু ‘জুলিও কুরি’ পদক নীতিমালা মন্ত্রিসভায় উঠছে
- বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযানে তিনজন নিহত
- সাগরে মাছ ধরা ৬৫ দিন বন্ধ
- ২৫ মে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের উদ্ভোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
- মেট্রোরেলে ভ্যাট এনবিআরের ভুল সিদ্ধান্ত
- বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী কানাডা
- সরকার ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে কাজ করছে: পরিবেশমন্ত্রী
- এমপিও শিক্ষকদের জন্য আসছে আচরণবিধি
- উত্তরা থেকে টঙ্গী মেট্রোরেলে হবে নতুন ৫ স্টেশন
- কেএনএফ মানে বম নই
- লামায় ছাত্রলীগের প্রতিবাদ সমাবেশ
- বান্দরবানে যৌথ অভিযানে তিন কেএনএফ সদস্য নিহত
- আজ জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
- স্বাধীনতাবিরোধীদের পদচিহ্নও থাকবে না: রাষ্ট্রপতি
- ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা দূর ৫০০ একর খাসজমি বরাদ্দ
- এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধা উঠে যাচ্ছে
- অস্বস্তি কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন মোড়
- তথ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে ৩ জন মুখপাত্র নিয়োগ দেওয়া হয়েছে
- বাংলাদেশে নতুন জলবায়ু স্মার্ট প্রাণিসম্পদ প্রকল্প চালু যুক্তরাষ্ট্রের
- বদলে যাবে হাওরের কৃষি
- মূল্যস্ফীতি হ্রাসে ব্যাংক থেকে ঋণ কমাতে চায় সরকার
- ডিসেম্বরে ঘুরবে ট্রেনের চাকা
- আশা জাগাচ্ছে বায়ুবিদ্যুৎ
- ড্রামভর্তি অস্ত্র-বোমার সরঞ্জাম উদ্ধার
- র্যাবের হাতে আটক কেএনএফ এর ২ সদস্য কারাগারে
- উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বান্দরবানে বিএনপির ৫ নেতা বহিষ্কার
- নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে আহত ৩ জন
- অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন অক্লান্ত পরিশ্রম করছে- জেলা প্রশাসক
- মিয়ানমারের সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি
- বদলি হলেও চাকরিতে যোগদান করেননি নাথান বমের স্ত্রী
- নাথান বম এখন কোথায়, কেএনএফের শক্তির উৎস কী
- ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলে কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হবে - বান্দরবান জেলা প্রশাসক
- কেএনএফের ২ জনকে রিমান্ড শেষে জেল হাজতে প্রেরণ
- প্রধানমন্ত্রী আজ দেশে ফিরছেন
- বৃষ্টির জন্য আগামীকাল বান্দরবানে নামাজ অনুষ্ঠিত হবে
- বান্দরবানে মে দিবস উদযাপন
- পরিবহন ধর্মঘটে বান্দরবানে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
- হুট করে হামলা শক্তির চেয়ে নিজেদের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ
- বান্দরবানে সেনা অভিযানে কেএনএর সন্ত্রাসী নিহত
- বৃষ্টিতে স্বস্তি নগরজুড়ে
- বান্দরবান সদরে আব্দুল কুদ্দুছ আলীকদমে জামাল উদ্দীন চেয়ারম্যান নির্বাচিত
- শূন্য পদ ৪২ টি! চিকিৎসা সংকটে থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- আর্তমানবতার সেবায় রেডক্রিসেন্ট সর্বদাই নিয়োজিত - বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি
- বান্দরবানে জিপিএ-৫, ১০০ জন,এগিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ
- বান্দরবানে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্রশিক্ষণ