কেএনএফ এর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ পাহাড়ি জনগনঃ বাড়ছে প্রতিবাদ

সম্প্রীতির জেলা হিসেবে খ্যাত পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এই সম্প্রীতির জেলায় গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর অত্যাচারে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবন।

পাহাড়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের নামে, আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে সংগঠনটির অর্থের জোগান দিতে তারা গুম, খুন,অপহরণ সহ নানা অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। মূলত দেশের বাইরে থাকা সংগঠনটির হাই কমান্ডের ইশারায় সংগঠনের সদস্যরা এভাবেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অর্থ সংগ্রহ করে দেশের বাইরে পাচার ও সংগঠনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, অবৈধ অস্ত্রের মজুদ করে থাকে।

বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্য মতে, কেএনএফ এর গত সেপ্টেম্বরের চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্মের তালিকা পর্যালোচনায় করলেই বোঝা যায় তারা পার্বত্য জনপদে কতটা হিংস্র মনোভাব নিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে ইতিমধ্যেই প্রশাসন ও কেএনএফ এর মধ্যে  শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছিলো শান্তি আলোচনা চলা অবস্থায় কোন উষ্কানিমূলক কর্মকাণ্ড সংগঠন টি পরিচালনা করবে না। তা শর্তেও পাহাড়ের সাধারণ মানুষের উপর তাদের নির্যাতন বন্ধ নেই।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৩ আগষ্ট  রুমা উপজেলার বিভিন্ন মার্মা পাড়া হতে কেএনএফ কর্তৃক দরিদ্র পাহাড়ী পরিবারগুলোর নিকট থেকে জোরপূর্বক খাবার (যেমনঃ হাস, মুরগী, কুকুর, ছাগল ও প্রতি পাড়া হতে ৫০ কেজি চাল) সংগ্রহ করা হয়। এছাড়াও প্রতি পরিবার হতে ৫০০ টাকা করে চাঁদা প্রদানের জন্য চাপ প্রদান করা হয়।

একই মাসের ২৭ তারিখে  রোয়াংছড়ি উপজেলার ১নং রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নে ইউএনডিপির ৯ জন বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিকট হতে কেএনএফ কর্তৃক মোবাইলের মাধ্যমে জনপ্রতি ৭০,০০০ টাকা করে চাঁদা দাবী করে। জানা যায় ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের কে ২৮শে আগস্ট এর মধ্যে  টাকা সহ তাদের সাথে সাক্ষাত করতে বলা হয়। 

গত ৬ই সেপ্টেম্বর  রুমা উপজেলার ১নং পাইন্দু ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড চাইনাগ্রো পাড়ায় কেএনএফ এর একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী চাঁদার টাকা কালেকশনের জন্য যায়। উক্ত পাড়াবাসীরা চাঁদার টাকা দিতে রাজী না হওয়ায় পাড়াবাসীকে একত্রিত করে এবং চাঁদা কেন দিবে না সে বিষয়ে জানতে চায়। এসময় তারা ব্লাঙ্ক ফায়ার করে আতঙ্ক ও ভয় ভীতি প্রদর্শন করে এবং চাঁদার টাকা না দিলে সকলকে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে। এছাড়াও গত ১০ সেপ্টেম্বর  বান্দরবান জেলাধীন রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩নং আলেক্ষ্যং ইউপির ৪নং ওয়ার্ড কচ্ছপতলী বাজারের একজন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে  মোবাইলের মাধ্যমে  ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। ভূক্তভোগী ব্যক্তি চাঁদাবাজকে চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বর্ণিত ব্যবসায়ীকে রাতের আধারে গুলি করে হত্যার হুমকি প্রদান করে।
 

গত ১৪ সেপ্টেম্বর  রোয়াংছড়ি উপজেলার দূর্নিবার পাড়ায় ১২/১৫ জন কেএনএফ  সদস্য এর একটি দল অবস্থান গ্রহণ করে।  পরবর্তীতে, সশস্ত্র দলটি বান্দরবান-রুমা সড়কের  নির্মানকাজে নিয়োগকৃত বুলডোজার ড্রাইভার এবং তার ৬ জন সহযোগী এর নিকট হতে নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং ৪টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

গত একমাসেই এরূপ অসংখ্য চাঁদাবাজির  অভিযোগ উঠেছে কেএনএফ এর নামে। পাহাড়ের সাধারণ মানুষ এক প্রকার তাদের হাতে জিম্মি হয়ে উঠেছে,অনেকেই প্রান নাশের হুমকির  ভয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনির কাছে চাঁদাবাজির  বিষয়ে মুখ খুলছে না।

তবে ভেতরে ভেতরে কেএনএফ এর এই অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ পাহাড়ি মানুষ প্রতিবাদে ফুসে উঠছে বলে জানা যায়। কোথাও কোথাও প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রতিরোধের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানা যায়। এক্ষেত্রে আবারো উত্তপ্ত হতে পারে পার্বত্য বান্দরবানের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক বম জনগোষ্ঠী মনে করে কেএনএফ এর কারনেই তারা স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারছে না। বর্তমানে অনেকেই তাদের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে জেলা উপজেলা শহর গুলোতে। আবার জীবিকার তাগিদে অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন রাজধানী সহ দেশের অন্যান্য শহরে। 

 বর্তমানে কেএনএফ এর আতংকে থেমে আছে পাহাড়ের সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। পর্যটন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের আনাগোনা নেই বললেই চলে। ফলে হোটেল মোটেল, পরিবহন, কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহ সকল পেশার লোকজন বেকার সময় পার করছেন। কিন্তু বিপদগামী কিছু বম যুবকের দায় পুরো বম সম্প্রদায় সহ আরো কয়েকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জনসাধারণ কে বহণ করতে হচ্ছে।

পাহাড়ের সাধারণ মানুষ চায় এই সম্প্রতির বান্দরবানে শান্তির সুবাতাস ফিরে আসুক। তারা কোন সংঘাত চায়না, তারা চায় দুবেলা দুমুঠো খাবার আর নিশ্চিন্ত মনে সন্তান সন্ততি নিয়ে নিজ ভূমিতে একটু শান্তিতে ঘুমাতে।