লামা হাসপাতালে প্রথমবারের মতো সাপে কাটা রোগীর সফল চিকিৎসা
বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথমবারের মতো বিষধর সাপে কাটা এক রোগীর সফল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মৃত্যু মুখ থেকে ফিরে এসেছেন চাইন শৈয়ে মার্মা (২২) নামের ওই যুবক।
বুধবার (৪ জুন) ভোরে গলা ব্যথা ও বারবার অচেতন হয়ে পড়ার উপসর্গ নিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।
সাপেকাটা রোগী, চাইন শৈয়ে মার্মা আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের থোয়াইনচিং হেডম্যান পাড়ার উচিমং মার্মার ছেলে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (UH&FPO) ডা. শোভন দত্ত জানান, শুরুতে রোগীর পরিবার বুঝতেই পারেননি তাকে সাপে কেটেছে। সকাল ৭টার দিকে জরুরি বিভাগে আনা হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী মেডিকেল অফিসার রোগীকে দ্রুত ভর্তি করেন। সকাল ১০টার দিকে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (RMO) ডা. মো. সোলেমান দায়িত্বে এসে রোগীর শারীরিক অবস্থা দেখে সাপে কাটা বলে নিশ্চিত হন।
পরে রোগীর পরিবারের সদস্যদের নির্দেশ দিলে, তারা বিছানার বালিশের নিচে মৃত অবস্থায় বিষধর সাপটি খুঁজে পান। ততক্ষণে রোগীর হৃৎপিণ্ড প্রায় ৭০ শতাংশ কার্যকারিতা হারায়।
মেডিকেল অফিসার ডা. মো. ফরহাদ উদ্দিন জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট। তিনি রোগীকে সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দেন এবং ১০ মিনিট পর রোগীর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসে। এরপর ইন্টিউবেশন করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। আমরা তাকে অ্যান্টিভেনোম, অ্যাড্রেনালিন ও অ্যাট্রোপিন দিয়ে চিকিৎসা করি।
তিনি আরও জানান, হাসপাতালে মাত্র একজন রোগীর জন্য অ্যান্টিভেনোম ছিল, সেটিই ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন কোনো রোগী এলে আমাদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না, কারণ আর কোনো অ্যান্টিভেনোম মজুত নেই।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সোলেমান বলেন, লামা হাসপাতালে এই প্রথমবারের মতো বিষাক্ত সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসা করা হলো। যদিও রোগী বর্তমানে বিপদমুক্ত, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে চট্টগ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, চিকিৎসা শুরু করতে গিয়ে রোগীর স্বজনরা বাধা দেন। সিপিআর ও ইন্টিউবেশন দিতে তারা শুরুতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে রোগীর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক হয়ে পড়লে তাদের রাজি করানো সম্ভব হয়। চিকিৎসা সফল হওয়ার পর তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন। এই সফলতা লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার এক উজ্জ্বল উদাহরণ বলে জানান আবাসিক মেডিকেল অফিসার।























